অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র।
কোনও প্রশ্ন নয়। কোনও মন্তব্য নয়।
ভারতকে ‘গণতন্ত্রের জননী’ হিসেবে তুলে ধরা মোদী সরকার লোকসভা নির্বাচনের মুখে কোনও প্রশ্নই সহ্য করতে নারাজ। এমনকি তা নরম স্বরে পশ্চিমি বিশ্বের কাছ থেকে এলেও। অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের গ্রেফতারির পরে প্রথম স্বর তুলেছিল জার্মানি। এর পরে আমেরিকার বিদেশ দফতরের তরফে বলা হয়েছিল, তারা ‘কেজরীওয়ালের গ্রেফতারির বিষয়ে নজর রাখছে’। একই সঙ্গে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রে ‘স্বচ্ছ, অবাধ আইনি প্রক্রিয়া’র জন্য নয়াদিল্লির কাছে আর্জিও জানায় বাইডেন প্রশাসন।
এর আগে ভারতের জার্মান দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কূটনীতিক জর্জ এনজ়ওয়াইলারকে তলব করেছিল বিদেশ মন্ত্রক। আর আজ ভারতে আমেরিকান দূতাবাসের কার্যকরী সহকারী প্রধান গ্লোরিয়া বারবেনাকে তলব করা হয়েছিল। ৪০ মিনিট ধরে বৈঠক চলে। মন্ত্রক সূত্রে খবর, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করার বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তার পরে
বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভারতের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্রের মন্তব্যের কড়া বিরোধিতা করেছি আমরা। কূটনীতিতে এক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় ও সার্বভৌমত্ব প্রসঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন। দু’টি গণতান্ত্রিক দেশের একে অপরের প্রতি আরও বেশি দায়িত্ব থাকে। না হলে এক অস্বাস্থ্যকর দৃষ্টান্তের দিকে বিষয়টি যাবে’। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ভারতের আইনি প্রক্রিয়ার ভিত তৈরি করেছে স্বাধীন বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থা। যা লক্ষ্যমুখীন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে সক্ষম। এই নিয়ে কাদা ছোড়া অনভিপ্রেত।’
নয়াদিল্লি আমেরিকান কূটনীতিককে তলব করার কয়েক ঘণ্টা পরেই ওয়াশিংটনে এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন সে দেশের বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। তিনি বলেন, ‘‘কূটনৈতিক বৈঠকে কী কথাবার্তা হয়েছে, তা প্রকাশ করা যাবে না। তবে আমরা আমাদের অবস্থানে অনড় থাকছি। স্বচ্ছ, ন্যায্য ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও আইনি প্রক্রিয়া যাতে শেষ হয়, সে দিকে আমাদের দৃষ্টি থাকছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের গ্রেফতারির বিষয়টির উপরে আমরা নজর রেখে যাব।’’
এখানেই না থেমে মিলার কংগ্রেসের প্রসঙ্গও তুলে আনেন। বলেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, কংগ্রেস অভিযোগ করছে যে তাদের বেশ কিছু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করেছে সে দেশের সরকার। এর ফলে নির্বাচনী প্রচার চালাতে দলটির অসুবিধা হতে পারে। প্রতিটি বিষয়েরই দ্রুত, স্বচ্ছ ও ন্যায্য আইনি নিষ্পত্তি চাইছি আমরা। আশা করি, এতে কারও কোনও আপত্তি থাকবে না।’’
এর আগে জার্মানির তরফেও কেজরীর গ্রেফতারি নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, তারা আশা করে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা’ এবং ‘মৌলিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ’ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও প্রযুক্ত হবে। জার্মান বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সেবাস্টিয়ান ফিশারের কেজরীওয়াল সংক্রান্ত সেই মন্তব্যকে ‘দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ আখ্যা দেয় ভারত। গত শনিবার তলব করা হয় ভারতে জার্মান দূতাবাসের সহকারী প্রধান জর্জ এনজ়ওয়াইলারকে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে বলে, “আমরা এই ধরনের মন্তব্যকে আমাদের বিচার প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা হিসেবে দেখছি।”
আজ কেজরীওয়ালের দল, আপ-এর পক্ষ থেকে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘মোদীর একনায়কতন্ত্র এবং দেশের গণতন্ত্রের করুণ পরিস্থিতি গোটা বিশ্বের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। মোদী বিশ্বে বিখ্যাত এক মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছেন’। সঙ্গে কিছু সংবাদমাধ্যমের ভিডিয়ো ফুটেজ তারা দেখিয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, কাতার, চিন, আমেরিকা ও জার্মানির মতো দেশগুলিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।