ছবি: রয়টার্স।
টিকাকরণ শুরুর দিন ঘোষণা করে দিল জার্মানি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেন্স স্প্যান জানিয়েছেন, প্রথম টিকা দেওয়া হবে আগামী ২৭ ডিসেম্বর। ইউরোপের অন্য দেশগুলো কিছু না-জানালেও শোনা যাচ্ছে, ওই দিনই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ২৭টি দেশেই টিকাকরণ শুরু হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্সি পর্যায়ক্রমে এখন জার্মানির হাতে। তাই তাদের ঘোষণা গোটা ইউরোপেই প্রযোজ্য হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তা ছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর প্রধান উরসুলা ফন ডের লেয়েন বলেছেন, ফাইজ়ার এখনও ছাড়পত্র পায়নি। ছাড়পত্র পেয়ে হলে হয়তো এক দিনেই টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জঁ কস্তেজ়ের কথাতেও সেই ইঙ্গিত মিলেছে। নির্দিষ্ট করে কোনও দিন উল্লেখ না-করলেও তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভ্যাকসিনেশন চালু হয়ে যাবে। জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্প্যান বলেন, ‘‘ফাইজ়ার-বায়োএনটেক কোভিড ভ্যাকসিনের ছাড়পত্র ও সরবরাহ নিয়ে কথা হয়ে গিয়েছে। বছর শেষের আগে সবটা পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে।’’
এ দিকে, আজ করোনা-পজ়িটিভ ধরা পড়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-র। রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে আগেই করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। এ বার সেই তালিকায় নাম উঠল মাকরঁ-রও। তবে এঁদের তুলনায় বয়স অনেকটাই কম ফরাসি প্রেসিডেন্টের। ৪২ বছর বয়সি মাকরঁ-র তাই ঝুঁকি কিছুটা হলেও কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। প্রেসিডেন্টের বাসভবন এলিজ়ে প্যালেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘‘উপসর্গ দেখা দিতেই পরীক্ষা করা হয়েছিল। সরকারি নিয়ম মেনে আপাতত সাত দিন আইসোলেশনে থাকবেন প্রেসিডেন্ট। তবে নিভৃতবাসে থেকে প্রেসিডেন্টের কাজকর্ম চালিয়ে যাবেন তিনি।’’
সম্প্রতি একাধিক ইউরোপীয় রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মাকরঁ। তার মধ্যে রয়েছেন, স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যাঞ্চেজ় এবং ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল। বুধবার মাকরঁ দেখা করেন পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী অ্যান্তোনিয়ো কোস্তার সঙ্গে। মঙ্গলবার ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস’-এর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সকলকেই আপাতত কোয়রান্টিনে রয়েছেন।
আমেরিকায় টিকাকরণ শুরু হয়ে গেলেও নয়া নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখনও ভ্যাকসিন নেননি। টিকা নেননি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও। এ নিয়ে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। দু’জনের বয়সই ৭০-এর ঘরে। বাইডেনের ৭৮। আর ট্রাম্পের ৭৪। কারণ হিসেবে অনেকেরই বক্তব্য, ‘ইউএস সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-র জারি করা
নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম ধাপে টিকা দেওয়া হবে স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্য কোনও জটিল রোগে আক্রান্তদের। এই ক্যাটেগরির কোনওটিতেই পড়েন না বাইডেন ও ট্রাম্প। কিন্তু পাল্টা যুক্তিও রয়েছে— রাষ্ট্রনেতাদের স্পেশ্যাল ক্যাটেগরিতে টিকা দেওয়াই যায়। তা ছাড়া, প্রেসিডেন্ট টিকা নিলে, তা বাসিন্দাদের মধ্যে টিকা নেওয়ায় উৎসাহ বাড়াবে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও টিকা নেননি। রাশিয়ায় যদিও বেশ কয়েক মাস হল টিকাকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। রুশ টিকা ‘স্পুটনিক ভি’ প্রথম দেওয়া হয় পুতিন-কন্যাকে। প্রেসিডেন্ট নিজেই ঘোষণা করেছিলেন তা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নিজে নেননি। গোটা অতিমারি পরিস্থিতিতে মূলত মস্কোর অনতিদূরে নিজের বাসভবনে থেকে দেশ চালাচ্ছেন তিনি। ক্রেমলিন পারতপক্ষে যান না বলেই শোনা যায়। ৬৮ বছর বয়সি পুতিনের বক্তব্য, ‘‘অন্য বয়সসীমায় টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমি নিয়ম মেনে চলি। বিশেষজ্ঞদের কথা শুনে চলছি। এখনও নিইনি, কিন্তু যখন সম্ভব হবে, নিয়ে নেব।’’