বাবা দর্জি। মা মহাত্মা গাঁধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি প্রকল্পের অধীন দিনমজুর। টালির চালের ঘরে জন্ম এই কিশোরের দিনে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়া জোটাই ছিল দুষ্কর।
পড়াশোনা ছেড়ে মা-বাবাকে সাহায্য করার জন্য কাজ করবেন বলে মনস্থির করে ফেলেছিলেন। মাত্র ৪ হাজার টাকা বেতনে রাতে নিরাপত্তারক্ষীর কাজও করতেন। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানো।
আজ তিনি নামজাদা কলেজের শিক্ষক। তাঁর নাম রঞ্জিত রামচন্দ্রন। রাঁচীর আইআইএম-এ সহকারী শিক্ষক তিনি।
২৮ বছরের রঞ্জিতের জীবন দেশের সমস্ত মেধাবী এবং দরিদ্র পড়ুয়াদের কাছে উদাহরণ স্বরূপ।
কেরলের কানহাগড়ের এক দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা রঞ্জিতের। ঘরের টালির চাল ফুটো হয়ে জল পড়ত।
এক কামরার সেই ঘর বৃষ্টি থেকে বাঁচানোর জন্য টালির উপর প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা হত। রান্নাবান্না হত বাড়ির সামনের উঠোনে।
স্কুলে পড়ার সময়ই সংসারের অভাব রঞ্জিতকে তাড়া করে বেড়াত। তিনি স্কুল ছেড়ে দিয়ে উপার্জন করে মা-বাবাকে সাহায্য করার কথা ভেবেছিলেন।
তবে সে যাত্রায় স্কুলের শিক্ষকদের উপদেশ মেনে পড়াশোনা ছাড়েননি। কিন্তু স্কুল পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়ে আর বসে থাকতে পারেননি তিনি।
কলেজে পড়ার পাশাপাশি বিএসএনএল-এর একটি শাখায় রাতে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। বিনিময়ে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা মাইনে পেতেন। সারা দিন পড়াশোনা করে রাতে কাজ, এ ভাবেই দিন চলছিল তাঁদের।
এর মধ্যে আরও একটি সমস্যার সম্মুখীন হন রঞ্জিত। মাদ্রাজ আইআইটি-তে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। মালয়ালম ছাড়া আর কোনও ভাষাতেই কথা বলতে পারতেন না। তাই মাদ্রাজ আইআইটি-তে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছিল তাঁর কাছে।
তখনও পিএইচডি মাঝপথে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। সে বারও শিক্ষকের পরামর্শেই তিনি পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বপ্ন পূরণ করেছেন নিজের।
গত বছর রঞ্জিতের পিএইচডি সম্পূর্ণ হয়। গত দু’মাস ধরে বেঙ্গালুরুর ক্রাইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তিনি।
সম্প্রতি নিজের সেই লড়াইয়ের কথা নেটমাধ্যমে সকলের সঙ্গে শেয়ার করে নিয়েছেন রঞ্জিত। তাঁর গল্প ইতিমধ্যেই প্রায় ৩৭ হাজার জন পছন্দ করেছেন।