ফাইল চিত্র।
ভারতের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির জন্য আরও এক বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই কাঠগড়ায় তুলল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
ভারতে এখন রোজ গড়ে সাড়ে তিন লক্ষের উপরে সংক্রমণ এবং মৃত্যু তিন হাজারেরও বেশি। বুধবার ফরাসি সংবাদপত্র ‘ল্য মঁদ’-এর সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে এই পরিস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রীকেই সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতির জন্য ‘করোনাভাইরাসের অপ্রত্যাশিত ভোলবদলের’ পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘ঔদ্ধত্য, অপরিণামদর্শিতা, এবং জনপ্রিয়তা আদায়ের চেষ্টা’কেই দায়ী করা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়াতেও যখন দেশে সংক্রমণ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল, তখন বিভিন্ন দেশে করোনা প্রতিষেধক পাঠিয়েছে ভারত। সেই টিকা-কূটনীতিকে বিঁধে ফরাসি সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘তখন বিশ্বের ওষুধ ভাণ্ডার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছিল ভারত। ভাবখানা ছিল এই রকম যে, নিজেদের জন্য পর্যাপ্ত টিকা রেখেই লক্ষ লক্ষ টিকা তারা বিদেশে সরবরাহ করছে। মাত্র তিন মাসের মধ্যে তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।’ ওই সংবাদপত্রের মতে, এর দায় শুধু ভাইরাস বা ভ্যারিয়েন্টের উপরে চাপানো যায় না। নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শিতার অভাব, নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তোলার উদগ্র বাসনা আর ঔদ্ধত্যই ভারতকে এই পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। অবস্থা এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিদেশি সাহায্যের প্রয়োজন পড়ছে।
মোদীর পাশাপাশি কাঠগড়ায় উঠেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও। গত বছর দেশ জুড়ে লকডাউনের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ওই সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘সংক্রমণ রুখতে ২০২০ সালে নৃশংস ভাবে দেশকে বন্দি করে, লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের উপেক্ষা করে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ বছরের গোড়াতে সেই সুরক্ষা বেড়ি তিনি নিজেই ভেঙে ফেললেন।’ আরও অভিযোগ, এ বছর একাধিক রাজ্যে ভোটের আবহে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা করেছেন প্রধানমন্ত্রী
মোদী। মানুষকে রক্ষা করার থেকেও নিজের ভাবমূর্তি গড়ায় বেশি ব্যস্ত ছিলেন। স্বাস্থ্যবিধি উড়িয়ে একের পর এক জনসভা করেছেন তিনি। কুম্ভের মতো জনসমাবেশের অনুমতি দিয়ে সংক্রমণের পথ প্রশস্ত করেছেন।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সারির সংবাদপত্র ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছিল, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতকে চরম সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তারও আগে মূল লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘দ্য সানডে টাইমস’-এ। তবে ভ্যাকসিন কুটনীতির ‘সাফল্য’ নিয়ে প্রচারে থাকা মোদী সরকার আন্তর্জাতিক স্তরে এমন সমালোচনার মুখে পড়ে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রের সম্পাদককে চিঠি লিখে ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, অতিমারির বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইকে খাটো করতেই কুৎসামূলক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।