১৭৪ বছর পর কাটতে চলেছে ব্রিটিশ নাবিক জন ফ্রাঙ্কলিনের রহস্যে মোড়া সমুদ্রাভিযানের জট। দুই জাহাজে সওয়ার হওয়া ফ্রাঙ্কলিন-সহ ১২৯ যাত্রীর মৃত্যু কী ভাবে হয়েছিল, তা সম্ভবত পরিষ্কার হয়ে যাবে খুব শীঘ্রই।
২০১৪ এবং ২০১৬ সালে খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল ফ্রাঙ্কলিনের সেই সমুদ্রাভিযানের দু’টি জাহাজের। তার ভিতরের পরিস্থিতি সম্প্রতি দূর নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র দিয়ে দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
যে ভাবে ভিতরের সমস্ত জিনিসপত্র এই ১৭৪ বছর ধরেও ভাল অবস্থায় রয়েছে, তাতে বিজ্ঞানীদের অনুমান, ভাল করে পরীক্ষানিরীক্ষা চালালে, দুই জাহাজের ১২৯ যাত্রীর শেষ দিনগুলোর পরিস্থিতি এবং এই অভিযানে দুই জাহাজ কী কী পর্যবেক্ষণ করেছিল, তা সহজেই জানতে পারা সম্ভব।
জন ফ্রাঙ্কলিন একজন ব্রিটিশ নাবিক ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির অফিসারও ছিলেন। বহু সমুদ্রাভিযান করেছেন। ১৮৪৫ সালে এই ফ্রাঙ্কলিনেরই তত্ত্বাবধানে ইংল্যান্ড থেকে পৃথিবীর উত্তর-পশ্চিম বরাবর নতুন রাস্তা খুঁজতে সমুদ্রাভিযান শুরু হয়। এরিবাস এবং টেরর নামে দুই জাহাজ নিয়ে ফ্রাঙ্কলিন রওনা দেন।
বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের দুই জাহাজে তিন বছরের জন্য খাবারদাবার মজুত করা ছিল। ইতিহাস বলে, ইউরোপ থেকে ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত যতগুলো সমুদ্রাভিযান হয়েছিল, তার মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে সুপরিকল্পিত এবং সুসংগঠিত।
স্কটল্যান্ডের অর্কনে দ্বীপ এবং গ্রিনল্যান্ডে নোঙর ফেলার পর, দুই জাহাজই আর্কটিক কানাডার উদ্দেশে রওনা দেয়। পরিকল্পনা ছিল আর্কটিক কানাডার বিভিন্ন প্রণালীর গোলকধাঁধাঁ ভেদ করে প্রশান্ত মহাসাগরে পৌঁছনো।
১৮৪৫ সালের মে মাসে রওনা হয়েছিল দুই জাহাজ। জুলাই মাসে কানাডার বাফিন আইল্যান্ডের কাছে তাদের শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল। হঠাত্ই নিখোঁজ হয়ে যায়। তার পর থেকে বহু তল্লাশি অভিযান হয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত দুই জাহাজের একটারও সন্ধান মেলেনি।
২০১৪ সালে প্রথম এরিবাসের সন্ধান পাওয়া যায়। কিং উইলিয়াম আইল্যান্ড থেকে ৩৬ ফুট নীচে জলের তলায় সেটা আজও পড়ে রয়েছে। আর ২০১৬ সালে এই আইল্যান্ড থেকে ৮০ ফুট দূরে দেখা মেলে টেরর-এর।
তল্লাশি চলাকালীন ১৮৪৮ সালে শিলাস্তূপের নীচে ক্যাপ্টেন ফ্রানসিস ক্রোজিয়ারের হাতে লেখা একটি চিরকূটও মেলে। যাতে পরিষ্কার লেখা ছিল, দেড় বছর ধরে বরফের স্তূপে আটকে পড়ে রয়েছে জাহাজগুলো। ইতিমধ্যেই স্যর ফ্রাঙ্কলিন-সহ ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তারপর ক্যাপ্টেন ক্রোজিয়ার ঠিক করেছিলেন, হেঁটে কানাডায় পৌঁছবেন। চিঠি থেকে এই তথ্যও পাওয়া গিয়েছিল। যদিও কানাডায় কেউই পৌঁছননি।
এতদিন এটুকুই জানা গিয়েছিল শুধু। কিন্তু কী এমন ঘটেছিল যে এত উন্নত জাহাজের এই করুণ পরিস্থিতি হয়েছিল? কীভাবে জাহাজ দুটো ডুবে গিয়েছিল? কী ভাবে যাত্রীদের মৃত্যু হয়েছিল? এ সব কিছু রহস্যই রয়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি দূর নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, জাহাজের গায়ে ধাক্কা লাগার কোনও চিহ্ন নেই। যদি তাই হয়, তা হলে জাহাজ দুটো ডুবল কী ভাবে?
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সমুদ্রের তলদেশে অত্যধিক ঠান্ডা এবং অন্ধকার। গুরুত্বপূর্ণ অনেক ম্যাপ এবং তথ্য যার ফলে আজও অক্ষত রয়েছে। সেগুলোই বিশ্লেষণ করে এই রহস্যের জট খুলতে চাইছেন তাঁরা।
শুধুমাত্র ক্যাপ্টেনের শোওয়ার ঘরের দরজাটাই এখনও পর্যন্ত খুলতে পারেননি তাঁরা। এই ঘরের ভিতরে কী রয়েছে, সেই রহস্য জানতেও উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা।