French Election 2024

ত্রিশঙ্কু ফরাসি পার্লামেন্ট, শীর্ষে বামেরা, দ্বিতীয় স্থানে মাকরঁর জোট, তিন নম্বরে নামলেন অতি দক্ষিণপন্থীরা

পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫৭৭ জন সদস্যকে বেছে নিতে ভোট দিয়েছিলেন ফরাসিবাসী। গত ৩০ জুন প্রথম দফার নির্বাচনে ৩৩ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে অতি দক্ষিণপন্থী দল প্রথম স্থানে ছিল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ১৮:৪৩
Share:

(বাঁ দিক থেকে) বাম জোটের নেতা জাঁ লুক মেলেনকন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ, অতি দক্ষিণপন্থী দলের নেত্রী মারিন ল্য পেন। —ফাইল চিত্র

বাম জোট ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর মুখরক্ষা করল। তবে, পুরোপুরি স্বস্তি মিলল না। ফ্রান্সের দ্বিতীয় তথা শেষ দফার পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বলছে, কোনও একক দল বা জোটই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ত্রিশঙ্ক পার্লামেন্টে আসন সংখ্যার নিরিখে এক নম্বরে রয়েছে বাম জোট। প্রথম দফায় ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে চমক দেখানো অতি দক্ষিণপন্থী দল ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) চলে গিয়েছে তৃতীয় স্থানে। আর মাকরঁর মধ্যপন্থী দল রেনেসাঁ পার্টির নেতৃত্বাধীন এনসেম্বল জোট রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।

Advertisement

এই ফলাফল প্রকাশ্যে আসার পরেই প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মাকরঁর মধ্যপন্থী জোটের নেতা গ্যাব্রিয়েল আটাল। তবে তিনি জানিয়েছেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না-হওয়া পর্যন্ত তিনি তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫৭৭ জন সদস্যকে বেছে নিতে ভোট দিয়েছিলেন ফরাসিরা। গত ৩০ জুন প্রথম দফার নির্বাচনে ৩৩ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে ন্যাশনাল র‌্যালি প্রথম স্থানে ছিল। কট্টর অভিবাসন বিরোধী নীতিকে সামনে রেখে ভোটে লড়েছিল তারা। বামপন্থী দলগুলির জোট পেয়েছিল ২৮ শতাংশ ভোট। অন্য দিকে, প্রেসিডেন্ট মাকরঁ এবং বর্তমান ফরাসি প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আটালের নেতৃত্বাধীন এনসেম্বল জোট ২১ শতাংশ ভোট নিয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছিল।

ফ্রান্সের ভোটগণনাকারী সংস্থাগুলির পরিসংখ্যান অনুসারে ৫৭৭ আসনবিশিষ্ট ফরাসি পার্লামেন্টে বাম দলগুলির জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট পেতে চলেছে ১৮৪ থেকে ১৯৮টি আসন। মাকরঁর মধ্যপন্থী জোট পেতে চলেছে ১৬০ থেকে ১৬৯টি আসন। আর অতি দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল র‌্যালি পেতে চলেছে মাত্র ১৩৫ থেকে ১৪৩টি আসন। সরকার গঠনের জন্য ‘ম্যাজিক ফিগার’ বা জাদুসংখ্যা ২৮৯। কোনও দল বা জোটই সেই সংখ্যার ধারেকাছে যায়নি।

Advertisement

মারিন ল্য পেনের অতি দক্ষিণপন্থী দলের জয়ের পথে কাঁটা বিছোতে জোট বেঁধেছিল বেশ কয়েকটি বাম দল। এই জোটে যেমন ছিল অতি বামপন্থী দল, তেমনই ছিল সোশ্যালিস্ট এবং পরিবেশ রক্ষা নিয়ে কাজ করা গ্রিন পার্টি। প্রথম দফার ভোটে অতি দক্ষিণপন্থীদের সাফল্যের পরেই বেশ কয়েকটি আসনে ‘বোঝাপড়া’ করেন মধ্যপন্থী এবং বামপন্থীরা। ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাতে ন্যাশনাল র‌্যালির বিরুদ্ধে পড়া ভোট ভাগ হয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে অন্তত ২০০টি আসন থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয় বামপন্থী কিংবা দক্ষিণপন্থী জোট। ফলে কোথাও বামপন্থী জোটের সঙ্গে, কোথাও মধ্যপন্থী জোটের সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় অতি দক্ষিণপন্থীদের।

পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক, ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকছেন মাকরঁই। ফ্রান্সে বর্তমানে আধা প্রেসিডেন্টশাসিত শাসনব্যবস্থা রয়েছে। বিদেশনীতি রূপায়ণ কিংবা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও অভ্যন্তরীণ নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন প্রধানমন্ত্রী। অতি দক্ষিণপন্থীরা পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মতান্তরের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। আলাদা দলের হাতে পার্লামেন্টের উচ্চ ও নিম্নকক্ষে রাশ এ পর্যন্ত বার তিনেক ছিল ফ্রান্সে। সর্বশেষটি ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সালের মাঝের সময়পর্বে। নিম্নকক্ষ বিরোধী দলের দখল থাকলে প্রেসিডেন্টের পদটি দুর্বল হয়ে যায়। আইন প্রণয়নের ব্যাপারে নিম্নকক্ষই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।

চলতি মাসের গোড়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভোটে ন্যাশনাল র‌্যালির কাছে তাঁর দলের পরাজয়ের পরে মাকরঁ জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকের চোখেই এই পদক্ষেপ ছিল জুয়ার চালের মতো। মাকরঁর আমলে মুদ্রাস্ফীতি ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে বড় অংশের ভোটারের ক্ষোভ রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, মাকরঁ উদ্ধত এবং সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন। কেউ কেউ বলেন, তিনি একটি কোম্পানির সিইও-র মতো দেশ চালান, কিন্তু অংশীদারদের সঙ্গে জোট গড়তেই ব্যর্থ হয়েছেন। বামপন্থী এবং সোশ্যালিস্ট দলগুলিও মাকরঁর বহু সিদ্ধান্তের বিরোধী। তবে বাম জোটের সঙ্গে মাকরঁ একটা ঐকমত্যে আসতে পারবেন বলে আশা অনেকের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement