বছরের শুরুতেই গমের দাম আগের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। ফাইল চিত্র ।
খাদ্যসঙ্কটের মুখে পড়তে চলেছে বিশ্ব। তার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে কিভ-মস্কো সঙ্ঘাত। বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে আসছে এ রকমই তথ্য। সমীক্ষায় দাবি, ২০২০ সাল থেকে কোভিডের প্রকোপে বিশ্ব জুড়ে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। পাশাপাশি কমেছে চাষাবাদ থেকে বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনও। জলবায়ু পরিবর্তন এবং একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে চাষাবাদ মার খেয়েছে। তাই সারা বিশ্ব ইতিমধ্যেই খাদ্যসঙ্কটের সীমানায় এসে দাঁড়িয়েছে। কোভিড পরিস্থিতির সামান্য উন্নতির কারণে বিশ্ব সবে মাত্র ঘুরে দাঁড়ানোর পর পরই চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি কিভের উপর আঘাত হানে মস্কো। আর এই সঙ্ঘাত সারা পৃথিবীতে খাদ্যসঙ্কটের সম্ভাবনা আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে বলেই উঠে এসেছে সমীক্ষায়।
কিভ-মস্কো সঙ্ঘাতের কারণে ইউক্রেনের শস্য ও তৈলবীজের রফতানি বন্ধ। ক্রেমলিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়ে রাশিয়া থেকেও খাদ্যশস্য আমদানি বন্ধ করেছে বহু দেশ। সারা বিশ্বে প্রায় ১২ শতাংশ খাদ্য সরবরাহ করে যুযুধান দুই দেশ।
বছরের শুরুতেই গমের দাম আগের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। তাপপ্রবাহের কারণে ভারত থেকে গমের রফতানি বন্ধ হওয়ার কারণে ১৬ মে-র পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরও ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে গমের দাম।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, ‘‘বিশ্ব ভয়ঙ্কর ভাবে খাদ্যসঙ্কটের মুখে পড়তে পারে।’’ এই খাদ্যসঙ্কট বেশ কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রধান খাদ্যগুলির মূল্য ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বে ইতিমধ্যেই ৪৪ কোটি থেকে ১৬০ কোটি মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য হাহাকার করছেন বলেও উঠে এসেছে সমীক্ষায়। আরও প্রায় ২৫ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের সীমারেখায় দাঁড়িয়ে আছে বলে ‘দ্য ইকনমিস্ট’-এর প্রতিবেদনে।
এই পরিস্থিতিতে যদি যুদ্ধ চলতে থাকে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্যের সরবরাহ কমে, তা হলে আরও কয়েক কোটি মানুষ দারিদ্রের মুখে পড়তে পারেন। রাজনৈতিক তরজা ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি অনাহারে পড়তে হতে পারে মানুষকে। সমীক্ষায় প্রকাশ, খাদ্যসঙ্কটের ফলে রেহাই পাবে না শিশুরা।
ভারতেও এই খাদ্যসঙ্কটের ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এমনিতেই ২০২১ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের নিরিখে ১১৬টি দেশের মধ্যে ভারতের জায়গা ১০১ নম্বরে। সব মিলিয়ে, পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে।