ছবি: সংগৃহীত।
বাঙ্কার বানানোর কাজটা শুরু হয়েছিল প্রায় ৭৫ বছর আগে। এখন মনে হচ্ছে, কাজে লেগে যাবে সেগুলি। অদূর ভবিষ্যতেই।
ফিনল্যান্ড নেটোতে যোগ দেওয়ার জন্য অতি-সক্রিয় হতেই পরোক্ষে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ক্রেমলিন। এ দিকে, ইউক্রেনের নেটো-ঘনিষ্ঠতার পরেই রাশিয়া সে দেশে হামলা চালায়। প্রায় তিন মাস ধরে সেই যুদ্ধ চলছে। কিভ, মারিয়ুপোল, ডনেৎস্ক, একের পর এক শহরে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ বার যদি রাশিয়া তার উত্তর-পশ্চিমের প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডের উপরে হামলা চালায়, তা হলে কী ভাবে আত্মরক্ষা করবে, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন ও তাঁর প্রশাসনের মনে।
এই প্রেক্ষিতেই ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমল থেকে তৈরি করা মাটির নীচের বাঙ্কারগুলির কথা প্রকাশ্যে এসেছে। হেলসিঙ্কির ফ্রানজ়েনিনকাটু স্ট্রিটে বহু প্রাচীন লোহার একটি ঘর রয়েছে। দেওয়ালে নানা গ্রাফিটি, অপরিচ্ছন্ন এই ঘরটি বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, ভিতরে প্রযুক্তির কী অসাধারণ নিদর্শন অপেক্ষা করে রয়েছে। ঘরটিতে ঢোকার জন্য একটিমাত্র দরজা। ভিতরে ঢুকলেই সিঁড়ি। নামলে মাটির ২৫ মিটার নীচে পৌঁছে যাওয়া যাবে। তার পরে আবার দু’টি ইস্পাতের দরজা। তৈরি। এতটাই ভারী যে, দু’জন শক্তিশালী মানুষও খুলতে পারবেন না। সেই দরজা পেরোলে শুরু হবে সুড়ঙ্গ। যার শেষ প্রান্তে অপেক্ষা করছে আর এক হেলসিঙ্কি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ফিনল্যান্ড আক্রমণ করেছিল রাশিয়া। ১৯৩৯-৪০ সালে সাড়ে তিন মাস ধরে চলা সেই ‘উইন্টার ওয়ার’-এ ফিনল্যান্ডের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। আকাশপথে রুশ হামলায় বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজধানী হেলসিঙ্কি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে হেলসিঙ্কির বাসিন্দাদের জন্য মাটির তলায় বাঙ্কার তৈরি করা শুরু করেন ফিনিশ ইঞ্জিনিয়ারেরা। ২০০ মাইল ধরে বিস্তৃত মাটির নীচের এই এলাকাটিতে অন্তত ৫০০ বাঙ্কার রয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, অন্তত ৯ লক্ষ মানুষের স্থান হবে এই বাঙ্কারগুলিতে। ফলে সহজেই আশ্রয় পাবেন শহরের ৬ লক্ষ ৩০ হাজার বাসিন্দা। বসবাসের উপযুক্ত তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা রয়েছে বাঙ্কারগুলিতে। রয়েছে উপযুক্ত বর্জ্য পরিষেবাও। হকি খেলার স্টেডিয়াম এবং সুইমিং পুলও রয়েছে মাটির নীচের এই ‘খুদে শহরে’।
রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাবে শঙ্কিত উত্তর-পূর্ব ইউরোপের বহু দেশই। তবে ‘প্রস্তুতি’ নিয়ে রাখছে ফিনল্যান্ড।