পম্পেইয়ে সেই প্রাচীন ‘ফাস্ট ফুড’ স্টল। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া।
রংবেরঙের ইটের তৈরি চুল্লি-সহ লাইভ স্ন্যাক্স কাউন্টার। কাউন্টারের গায়েই সচিত্র মেনু— বুনো মোরগ, বুনো হাঁস ইত্যাদি। আর জায়গায় জায়গায় ছাইয়ের পুরু আস্তরণ! না, চুল্লির ছাই নয়। এ ছাই জ্বলন্ত লাভার ফেলে রাখা ছাপ— আগ্নেয়গিরির ছাই। প্রায় দু’হাজার বছর আগেকার। গত বছর থেকেই ইটালির প্রাচীন ‘মৃত’ শহর পম্পেই-এ খননকার্য শুরু করেছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। সম্প্রতি সেখানে মিলল ‘ফাস্ট ফুড’ স্টলের খোঁজ! প্রাচীন রোমানদের এ সব রোজকার জলখাবার ছিল, নাকি স্বাদ বদলের আয়োজন— দোকান দেখে মাথা ঘামাতে শুরু করে দিয়েছেন গবেষকরাও।
ইতিহাস বলছে, ৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির দমকা লাভার স্রোতে চাপা পড়ে যায় পুরো পম্পেই নগরী। অন্তত ছ’মিটারের লাভা-সমাধি। এতে ২ হাজার থেকে ১৫ হাজার মানুষ মারা যান। অনেকে পালিয়েও বাঁচেন। যেমন গবেষকদের অনুমান, ওই রোমান ফাস্ট ফুডের স্টলটি অগ্ন্যুৎপাত শুরু হওয়া মাত্রই তড়িঘড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
পম্পেইয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক পার্কের ডিরেক্টর জেনারেল মাসিমো ওসানা সংবাদমাধ্যমকে জানান, সদ্য হদিশ মেলা এই খাবারের দোকানটি খুব সম্ভবত সিলভার ওয়েডিং স্ট্রিট এবং অ্যালে অব ব্যালকনিজ়-এর মাঝামাঝি কোথাও ছিল। এই ধরনের দোকানগুলিকে বলা হত— ‘থার্মোপোলিয়াম’। এমন দোকান শুধু এই শহরেই অন্তত ৮০টি ছিল বলে দাবি প্রত্নতাত্ত্বিক দলটির। গ্রিক শব্দ ‘থার্মোস’ মানে গরম, আর ‘পোলেও’-র অর্থ বিক্রি! গরমাগরম খাবার বিক্রির জন্যই ছিল লাইভ কাউন্টার।
প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক খোঁড়াখুঁড়িতে ওই থার্মোপোলিয়ামে হাঁস, শূকর ও ছাগলের হাড়ের টুকরো মিলেছে। মাটির পাত্রে পাওয়া মাছ ও শামুকের অবশেষ দেখে ধরে নেওয়া যায়, এ সবও ছিল মেনুতে। এবং বেশির ভাগটাই পরিবেশন করা হত ওয়াইন বা এই জাতীয় কোনও পানীয়ের সঙ্গে। ওয়াইনের স্বাদ বাড়াতে প্রাচীন রোমানদের মধ্যে পেষাই করা মটরশুঁটি ব্যবহারের চল ছিল। সেই নমুনাও মিলেছে স্টলটি থেকে।
দোকানটির অদূরে খুব সম্ভবত একটি ঝরনাও ছিল। আর খননকার্য চালাতে গিয়ে মিলেছে এক পঞ্চাশোর্ধ পুরুষের দেহাবশেষ এবং একটি শিশুর বিছানা। মনে করা হচ্ছে, এই পুরুষটি দোকানের পিছনেই থাকতেন। অগ্ন্যুৎপাত শুরুর পরে কোনও ভাবে তিনি পালাতে পারেননি।
মৃত শহর পম্পেই কিন্তু এখনও ইটালির দ্বিতীয় জনপ্রিয় পর্যটন স্থল। গত বছরও এখানে ৪০ লক্ষ পর্যটক এসেছিলেন— লাভাস্রোতের নীচে রাতারাতি ঘুমিয়ে পড়া একটা শহর দেখতে। সদ্য পাওয়া ‘ফাস্ট ফুড’ স্টলের হদিশ তাঁদের এবং গবেষকদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিল বলেই মনে করা হচ্ছে।