ছবি: রয়টার্স।
আগামী বছর শীতকালীন অলিম্পিক্সের আয়োজক দেশ চিন। প্রস্তুতির জন্য ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। গোটা প্রতিযোগিতা এ বার বায়ু ও সৌরচালিত শক্তি থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ নিয়ে করার পরিকল্পনা করেছে শি চিনফিংয়ের সরকার। বিশ্বে এই প্রথম বার এত বড় মাপের কোনও অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে হতে চলেছে। গোটা বিশ্বের কাছে তাই মুখরক্ষা করা চিনা সরকারের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ পূরণ করতে গিয়েই দেশের কৃষকদের একাংশ আর্থিক ভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নির্দেশ না মানলে জুটছে অত্যাচার এমনকি হাজতবাসও।
অলিম্পিক্স চলাকালীন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে রাজধানী বেজিং সংলগ্ন হেবেই প্রদেশে বিশাল সৌর প্যানেলের কারখানা তৈরি করা হয়েছে। শীতকালে বেজিং ও তার চারপাশের এলাকা প্রায়ই ধোঁয়াশায় ঢেকে থাকে। অলিম্পিক্স চলাকালীন যাতে পরিবেশ পরিষ্কার ও শুদ্ধ থাকে, তার জন্যও দূষণ কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ সব করতে গিয়েই কৃষকদের একটা বড় অংশকে আর্থিক ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। অনেকেরই চাষযোগ্য জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে সৌর প্যানেল বসানোর জন্য। অথচ তার জায়গায় দেওয়া হয়েছে নামমাত্র ক্ষতিপূরণ। শীতের মরসুমে ঘর গরম করার আর্থিক সামর্থ্যও নেই এখন অনেকের কাছে।
বেজিংয়ের কাছে হুয়াংজিয়াও গ্রামের কৃষক লং যেমন জানালেন তাঁর অর্ধেক চাষের জমিই সরকার সৌর প্যানেল বসানোর জন্য নিয়ে নিয়েছে। তিনি স্পষ্টই বললেন, ‘‘সরকারের তরফে যা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে সংসার চলে না। ওই জায়গায় ভুট্টা চাষ করলে এর দ্বিগুণ অর্থ ঘরে আসত।’’ প্রতিবাদ করেও ফল হয়নি বলে জানাচ্ছেন লং। তাঁর বক্তব্য, সরকারের বিরুদ্ধে গেলেই জুটেছে অত্যাচার আর মারধর। সরকারি জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোয় লং ও তাঁর প্রতিবেশী পি-কে জেলও খাটতে হয়েছে। ওই কৃষকের কথায়, ‘‘পি যেখানে ৪০ দিন জেল খেটেছে, আমায় সেখানে ন’মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি থাকতে হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার অভিযোগ আনা হয়েছিল আমার বিরুদ্ধে।’’
তবে সৌরশক্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ ভাবে চাষযোগ্য জমিতে প্যানেল বসানো আদৌ বিজ্ঞানসম্মত নয়। লংয়ের মতো চাষিদের অভিযোগ নিয়ে অবশ্য সরকার মুখে কুলুপ এঁটেছে। মুখ খুললে শাস্তির ভয়ে আপাতত চুপ বঞ্চিত কৃষকেরাও।