সাধ করে বহু পুরনো একটি বাড়ি কিনেছিলেন মরফি পরিবার। সেই বাড়িতেই পাকাপাকি ভাবে থাকার প্রস্তুতি চলছিল তাঁদের।
বাড়ি পরিষ্কার করে ঘর গোছানোর সময়ই দেওয়ালে একটি অদ্ভুত লেখা চোখে পড়ে।
ইংরাজি হরফে লেখা ‘অতীত’ এবং ‘ভবিষ্যৎ’ সংক্রান্ত যেন কিছু কথা। যার একেবারে নীচে লেখা ১৯৭৫। পাশে এলেন ওয়ালমসলে বলে একটি নাম।
যে দেওয়ালে এগুলি লেখা ছিল, সেটি আসলে পুরোটাই ঢাকা ছিল ওয়ালপেপারে। তাই বাড়ি কেনার সময় লেখাটি চোখে পড়েনি তাঁদের।
পুরনো বাড়ি কেনার পর নতুন মালিকের গুপ্ত ঘর, ঐতিহাসিক দ্রব্য ইত্যাদি খুঁজে পাওয়ার খবর আকছাড় শোনা যায়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলি নিয়ে নতুন মালিক বিশদে খোঁজখবর করেছেন, এমন সচরাচর শোনা যায় না।
মরফির পরিবার কিন্তু সেটাই করেছে। খোঁজখবর করে বহু কষ্টে ইংরাজি ওই হরফগুলির অর্থ যেমন বার করেছেন, তেমন লেখককেও খুঁজে বার করেছেন।
ব্রিটেনে রয়েছে ওই পুরনো বাড়িটি। সেটিই সম্প্রতি কিনেছিলেন কার্ল মরফি। স্ত্রী এবং মেয়ের সঙ্গে ওই বাড়িতে পাকাপাকি ভাবে থাকবেন স্থির করেছিলেন তিনি এবং সে জন্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছিল। যে ঘরের দেওয়ালে লেখাটি দেখতে পেয়েছেন তাঁরা, সেটিতেই মেয়ের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন।
ওয়ালপেপার সরানোর পর প্রথম মেয়ের চোখেই লেখাটি পড়েছিল। লেখাটিতে ‘অতীত’ এবং ‘ভবিষ্যতে’র কথা পড়ে কার্ল এবং তাঁর পরিবারের মনে হয়েছিল, সেটি নিশ্চয় ‘টাইম ট্রাভেল’ সংক্রান্ত কোনও ঘটনার বিবরণী।
দেওয়ালের ছবি তুলে তাঁরা নেটমাধ্যমের পাতায় পোস্ট করে দেন। ‘টাইম ট্রাভল’-এর সঙ্গে এই লেখার এবং লেখকের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা জানতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা।
খবর চাউর হতে এক মহিলা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, প্রকৃত লেখককে তিনি চেনেন এবং তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করছেন।
মহিলার কথা শুনে মরফি পরিবার যেন তাজা অক্সিজেন পেয়েছিলেন। নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় মত্ত হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা সকলেই। তাঁরা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন, ওই লেখকের অবশ্যই ‘টাইম ট্রাভেল’-এর অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এর কয়েকদিনের মধ্যে এলন নামে ওই মহিলাও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কেন তিনি এমন সব কথা লিখেছিলেন, তা খুলে জানান। কিন্তু এলনকে খোঁজার জন্য যতটা উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল মরফি পরিবার, এলেনের মুখ থেকে সবটা জানার পর সেই উত্তেজনা তাঁরা হারিয়ে ফেলেন। কারণ?
এলন জানান, তিনি তখন খুব ছোট। ওই ঘরে বোনের সঙ্গে থাকতেন। তাঁর ঘরের কিছু মেরামতির কাজ শুরু হয়েছিল তখন। দেওয়াল জুড়ে ওয়ালপেপার লাগানোর পরিকল্পনা ছিল। এলেন মনে করেছিলেন, এই সময় পুরনো দেওয়ালে কিছু না কিছু নিজের ছাপ রেখে দেওয়াটা জরুরি। যা নিছকই কৈশোরের ভাবনা ছিল তাঁর।
নিজের বানানো একটি কবিতার লাইন লিখে ফেলেন দেওয়ালে। আর ওই কবিতাটিই ছিল টাইম ট্রাভেল নিয়ে লেখা।
এলেনের বয়স এখন ৬০ বছর। দুই সন্তানের মা তিনি। পদবিও বদলে গিয়েছে অনেক আগে। অনেক বছর হল পুরনো বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র উঠে গিয়েছেন তাঁরা। তাঁরই লেখা কবিতার লাইন ধরে যে তিনি ফের একবার ছোটবেলার ফিরে যেতে পারবেন ভাবেননি কখনও।
এই ঘটনায় এলন অত্যন্ত খুশি। তবে টাইম ট্রাভেল-এর সত্যান্বেষণ করে কিছুটা হলেও ভেঙে পড়েছে মরফিরা।