নামে ডিম। দেখতেও ডিমের মতোই। কিন্তু কাজে ডিম নয়। বরং, মহার্ঘ্য উপহার। তার নাম ‘ফাবেরজে এগ’। সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার প্রখ্যাত রত্নকার পিটার কার্ল ফাবেরজে-এর তত্ত্বাবধানে এই ‘ডিম’ তৈরি হয়েছিল। যা ছিল অভিজাতদের ইস্টার-উপহার।
নির্মাতার নাম অনুসারে উপহারের নাম হয় ‘ফাবেরজে এগ’। রাজকীয় এই উপহার কতগুলি তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ে বহু মত আছে। একটি সূত্র থেকে জানা যায়, তৈরি হয়েছিল প্রায় ৬৯টি ডিম।
এর মধ্যে ৪৬টি তৈরি হয়েছিল রুশ সম্রাট জার তৃতীয় আলেকজান্ডার এবং জার দ্বিতীয় নিকোলাসের জন্য। ইস্টারে এই উপহার তাঁরা দিতেন তাঁদের মা ও স্ত্রীকে।
প্রথম ফাবেরজে এগ তৈরি হয়েছিল ১৮৮৫ সালে, জার তৃতীয় আলেকজান্ডারের নির্দেশে। ইস্টারে তিনি সেটি উপহার দিয়েছিলেন স্ত্রী, সম্রাজ্ঞী মারিয়া ফিওদোরোনোভাকে।
‘হেন এগ’ বা মুরগির ডিম নামে পরিচিত এই ‘ডিমের’ সাদা অংশ তৈরি হয়েছিল ওপাক এনামেল্ড দিয়ে। খোলস খুললেই ভিতের দেখা যেত সোনার তৈরি কুসুম।
অভিনব উপহারে আপ্লুত হয়ে যান সম্রাজ্ঞী মারিয়া। এরপর জারের মুকুটের জন্য বিশেষ অর্ডার পৌঁছয় পিটার ফাবেরজে-এর কাছে। বানাতে হবে এই রকমই অভিনব জিনিস। দেওয়া হল স্রষ্টার পূর্ণ স্বাধীনতা। শর্ত একটাই, নির্মাণে থাকতে হবে অভিনবত্ব।
তৃতীয় আলেকজান্ডারের পরে উপহারের এই ধারা বজায় ছিল তাঁর ছেলে দ্বিতীয় নিকোলাসের আমলেও। ১৮৮৫ থেকে ১৯১৭ সাল অবধি, প্রতি বছর ইস্টার উপলক্ষে তৈরি হয়েছে এই উপহার। শুধু, ১৯০৪ ও ১৯০৫, এই দু’বছর বন্ধ ছিল রুশ-জাপান যুদ্ধের কারণে।
রাশিয়ার জার পরিবারের বাইরেও পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন অভিজাত ও সম্পন্ন ব্যবসায়ী পরিবারের নির্দেশে তৈরি হয়েছে ফাবেরজে এগ। বলশেভিক বিপ্লবের পরে ফাবেরজে পরিবার রাশিয়া ছেড়ে চলে যান। এর পরে বহুবার ফাবেরজে ট্রেডমার্কের হাতবদল হয়েছে।
যতগুলি ফাবেরজে এগ তৈরি হয়েছে, প্রত্যেকটি একে অন্যের থেকে আলাদা। সোনা বা অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর উপর বসানো হয়েছে হিরে, চুনি, পান্নার মতো মহার্ঘ্য রত্ন।
কিছু ফাবেরজে এগ সেরার সেরা বলে বিবেচিত হয়। তার মধ্যে একটি ‘ডায়মন্ড ট্রেলি’। এটি হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি। তার উপরে বসানো মূল্যবান পাথর। আর একটি উল্লেখযোগ্য ফাবেরজে এগ হল ‘গাটচিনা প্যালেস’ এগ। যেখানে প্রাসাদের রেপ্লিকা তৈরি হয়েছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তৈরি হয়েছিল ‘অর্ডার অব সেন্ট জর্জ’ ইম্পেরিয়াল এগ। রাশিয়ান সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এটি।
তবে ফাবেরজে সংস্থার তৈরি সব রাজকীয় উপহারই যে ডিমের মতো দেখতে, তা নয়। ১৮৮৭ সালের এই উপহার ছিল ডিমের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ঘড়ি। ১৪ ক্যারেট সোনার তৈরি এই ঘড়ির কাঁটায় ছিল হিরে বসানো।
সিংহের পা-এর আকারবিশিষ্ট তেপায়ার উপর বসানো এই ডিম-ঘড়ি সাজানো হয়েছে হিরে এবং স্যাফায়ারে।
এই অভিনব মহার্ঘ্য উপহারের পিছনে সব কৃতিত্ব পিটার কার্ল ফাবেরজে-কে দিতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, নতুন নতুন অভিনবত্বের পিছনে কৃতিত্ব রয়েছে অনেকের। কিন্তু বাকি নাম কোনওদিন প্রকাশ্যে আসেনি। সব কৃতিত্ব পেয়েছেন ফাবেরজে একাই।
এই মহার্ঘ্য উপহারের মধ্যে অন্তত ২৩ টির এখনও কোনও খোঁজ নেই। দীর্ঘদিন ধরে সেগুলি খুঁজে চলেছে গুপ্তধন শিকারিরা। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)