—প্রতীকী চিত্র।
প্রতিষেধক চলে এসেছে, কিন্তু কবে শেষ হবে অতিমারি? বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীদের কাছেও এর উত্তর নেই। কারণ টিকা এলেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে টিকাকরণের গতি দুর্বল থেকে দুর্বলতম। কেউ খুব এগিয়ে (ইজ়রায়েল), কেউ একেবারেই পিছিয়ে (প্রায় সব গরিব দেশ)। বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, এ ভাবে চললে করোনাভাইরাস নিশ্চিহ্ন হতে অন্তত সাত বছর লেগে যাবে।
সংক্রমণ ও মৃত্যু তালিকার শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। ২ কোটি ৭২ লক্ষ সংক্রমণ। ৪ লক্ষ ৬৭ হাজার মৃত্যু। এ অবস্থায় আমেরিকার স্বাস্থ্য কর্তা অ্যান্টনি ফাউচির কথায়, ‘‘দেশের ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা ভ্যাকসিন পেয়ে গেলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।’’ কিন্তু তা হবে কবে? সমীক্ষা বলছে, আমেরিকার মতো প্রথম বিশ্বের দেশেই এই লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে ছুঁতে ২০২২ এসে চলে আসবে। আজ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’ তাদের তৈরি প্রতিষেধককে জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য আমেরিকা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। যদি ছাড়পত্র মেলে, সে ক্ষেত্রে ফাইজ়ার, মডার্নার পরে আমেরিকার বাজারে চলে আসবে তৃতীয় করোনা-প্রতিষেধক।
টিকাকরণের হারে সব চেয়ে এগিয়ে ইজ়রায়েল। দু’মাসে ৭৫ শতাংশ টিকাকরণ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে তারা। পরে রয়েছে ব্রিটেন, আমেরিকা। সার্বিক ভাবে দেখলে বাকি বিশ্বের তুলনায় পশ্চিমের দেশগুলো অনেকটাই এগিয়ে।
কিন্তু ব্রিটেনে টিকাকরণ কিছুটা গতি পেলেও পিছিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর বাকি দেশগুলি। মাত্র ২.৫ শতাংশ মানুষ প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ়টি পেয়েছেন। এই মুহূর্তে অবশ্য একাধিক গবেষণাগার টিকা প্রস্তুতে অংশ নেওয়ায় উৎপাদনে গতি এসেছে। ফলে ইইউ-এ শীঘ্রই টিকাকরণের হার বাড়বে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ চিনের তৈরি ভ্যাকসিন নিয়ে সতর্ক করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের ভ্যাকসিন সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য নেই। এ দিকে ওরা টিকা বিতরণ করছে বিভিন্ন দেশে। কার্যকরী না হয়ে উল্টে ওগুলো মিউটেশন ঘটিয়ে নতুন স্ট্রেন তৈরি করতে পারে। আমাদের কিছুই জানা নেই...।’’ এক দিন আগেই ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডার লেন-ও রাশিয়া এবং চিনকে ভ্যাকসিন-বিষয়ক যাবতীয় তথ্য প্রকাশ্যে আনার আর্জি জানান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ইউরোপ শাখার প্রধান হান্স ক্লুগও বিচলিত ভাইরাসের অতিসংক্রামক স্ট্রেনগুলি নিয়ে। এগুলি রুখতে ভ্যাকসিন আদৌ কতটা কার্যকরী হবে, তা নিয়ে সন্দিহান তিনি। হান্স বলেন, ‘‘ভাইরাস যে মিউটশেন ঘটিয়ে আরও মারাত্মক চেহারা নিতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের তৈরি থাকতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে... ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোকে একত্রে টিকা উৎপাদন বাড়াতে হবে... আমাদের এখন এটাই প্রয়োজন।’’
কিন্তু নতুন স্ট্রেনগুলির কী হবে? হান্স বলেন, ‘‘ওটা একটা বড় প্রশ্ন। আমরা খুবই চিন্তিত। ওই মিউটেটেড স্ট্রেনগুলোই মনে করিয়ে দেয়, ভাইরাস এখনও জিতছে!’’