Bangladesh

জাতিগত সংঘর্ষ বাংলাদেশের তিন পাহাড়ি জেলায়

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দফতর থেকে বিবৃতি দিয়ে পাহাড়ের ঘটনায় সকলকে শান্ত থাকার আবেদন জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল শনিবার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৫
Share:

বাংলাদেশের খাগড়াছড়িতে চাকমা ও অন্য জনজাতির উপরে হামলার প্রতিবাদে সভা। শুক্রবার চট্টগ্রামের চেরাগী মোড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় পাহাড়ের আদি বাসিন্দা জনজাতিদের সঙ্গে বহিরাগত সমতলের বাসিন্দাদের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের হিসাবে, মোটরসাইকেল চুরির সময়ে হাতেনাতে ধরা পড়া এক অজনজাতীয় লোকের গণপিটুনিতে মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে অজনজাতি লোকেরা চাকমা ও অন্য জনজাতিদের বাড়িঘর ও দোকান ভাঙচুর করা শুরু করলে অশান্তির শুরু। সেনাদের গুলিতে তিন জন চাকমা নিহত হয়েছেন বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হলেও, স্থানীয়রা বলছেন— নিহতের সংখ্যা অন্তত ৮ থেকে ১০ জন। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ১৪৪ ধারে জারি করা হয়েছে। কিন্তু অশান্তি আটকানো যায়নি। চাকমাদের অভিযোগ, সেনাবাহিনী অজনজাতীয়দের পক্ষে মাঠে নামায় তাঁরা বিস্মিত হয়েছেন।

Advertisement

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দফতর থেকে বিবৃতি দিয়ে পাহাড়ের ঘটনায় সকলকে শান্ত থাকার আবেদন জানানো হয়েছ‌ে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল শনিবার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু চাকমাদের উপরে হামলার প্রতিবাদে এ দিন চট্টগ্রাম শহরের চেরাগী মোড়ে জনজাতিরা বিরাট মিছিল বার করে। জনসভাও হয়। খাগড়াছড়িতেও ‘মার্চ ফর আইডেন্টিটি’ নাম দিয়ে মিছিলে এ দিন পা মেলান প্রায় ৪০ হাজার জনজাতি। চাকমাদের অভিযোগ, হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই বাইরে থেকে এসে বসতি গড়া লোকেরা চাকমাদের উপরে হামলা, জমি দখল এবং দেশছাড়ার জন্য হুমকি দিতে শুরু করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনবিন্যাস বদলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে প্রায় ৫০ হাজার সমতলের মানুষকে পাহাড়ে বসতি গড়ে দেওয়া হয়। ‘সেটলার’ নামে পরিচিত সেই জনগোষ্ঠী আজ সংখ্যায় বহুগুণ বেড়ে চাকমা ও অন্য জনজাতিদের অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে।

চাকমাদের উপরে হামলা ছাড়াও বাংলাদেশে গত দু’দিনে একটার পর একটা ঘটনা ঘটেছে, যাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং অন্য বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা প্রকট হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার, বাংলাদেশ বেতার পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা উর্দুতে অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু করছে বলে সরকারি ঘোষণা সামনে আসায় ইউনূস সরকারের আসল কান্ডারি জামায়াত এবং হিযবুত তাহরীরের মতো কট্টরপন্থী সংগঠনগুলি কি না, সেই সংশয় দেখা দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই ইউনূস সরকারে প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তিরা বাংলাদেশের ছাত্রদের পাকিস্তানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সে দেশের হাই কমিশনারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। তার পরে সরকারি বেতারে উর্দু অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠেছে, ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আর পালন হবে তো?

Advertisement

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার এক যুবককে আটকে রেখে দফায় দফায় মারধর করে খুন করা হয়েছে। শামীম মোল্লা নামে এই যুবকের ‘অপরাধ’ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাঁকে মারধর ও খুনে নেতৃত্ব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কোটা-বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক ও তার অনুগতরা। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইল ফোন সমেত ব্যাগ চুরির সন্দেহে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে মেরেছে এক দল ছাত্র। এক দফা মারধরের পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে তোফাজ্জল নামে ওই যুবক নির্দোষ বুঝে কিছু ছাত্র তাকে ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়ান। তার পরে তোফাজ্জলকে ছেড়ে দেওয়ার পরে ছাত্রদের আর একটি দল তাকে পিটিয়ে খুন করে। দু’টি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন দু’টি ঘটনা দেশবাসীকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এর পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মচারীদের রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। দেশের অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই নির্দেশ কার্যকর হতে চলেছে বলে খবর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা-বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর মৌরসিপাট্টা মজবুত করার জন্য এই
সিদ্ধান্ত বলেই অন্য ছাত্র সংগঠনগুলির অভিযোগ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও তার পর সব রাজনৈতিক আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, বৃহস্পতিবার সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রো-ভিসি এবং ক্যাশিয়ারকে এ দিন শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা-বিরোধী আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক
পলাশ বখতিয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement