সোমবার থেকে সব কোভিড বিধিরই প্রত্যাহার ব্রিটেনে। -ফাইল ছবি।
সোমবার থেকে অতিমারি পর্বের যাবতীয় বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তা ব্রিটেন তো বটেই গোটা বিশ্বের পক্ষেই অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠতে চলেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ডেল্টার মতো করোনাভাইরাসের শক্তিশালী রূপগুলি আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য ‘উর্বর জমি’ পেয়ে যাবে। দেশে দেশে সার্বিক টিকাকরণের ছবিটা যখন রীতিমতো ঝাপসা, তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের ফলে করোনা সংক্রমণ আরও বেশি করে লাগামের বাইরে চলে যাবে। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘ল্যানসেট’-এর সম্পাদকের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রিটেন-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১২০০ জন বিজ্ঞানী।
নিউজিল্যান্ড, ইটালি এবং ইজরায়েল সরকারের বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের এক আন্তর্জাতিক অনলাইন শীর্ষক সম্মেলনেও। তাঁদের বক্তব্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া ও সেই সব দেশ থেকে নিজের নিজের দেশে ফিরে আসার জন্য ব্রিটেন একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের সেতু। লন্ডন-সহ ব্রিটেনের বিভিন্ন বিমানবন্দরে প্রচুর বিদেশি বিমান ওঠানামা করে। ব্রিটেনর সমুদ্রবন্দরগুলিও খুব ব্যস্ত থাকে। অতিমারি পর্বের যাবতীয় বিধিনিষেধ এখনই প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে সেই যাতায়াত ফের তুমুল গতিতে শুরু হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। তার ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য প্রচুর সংখ্যক মানুষ পেতে করোনাভাইরাসের রূপগুলির সুবিধা হবে। ব্রিটেন গোটা বিশ্বের কার্যত পরিবহণ ‘হাব’ বলে করোনাভাইরাসের রূপগুলির এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে আরও সুবিধা হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ১৭ জুলাই পর্যন্ত ব্রিটেনে দৈনিক কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৪ হাজার ৬৭৪। মৃতের সংখ্যা ৪১। আর মোট মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৬৮৩। এই সংক্রমণ রোখার জন্য ব্রিটেনে যে সার্বিক টিকাকরণের কাজ প্রায় সেরে ফেলেছে তা-ও নয়। গত ১৭ জুলাই পর্যন্ত ব্রিটেনে ২ লক্ষ ৫৬ হাজার ৯৩২ জনকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এঁদের মধ্যে একটি কোভিড টিকা পেয়েছেন ৬৯.২ শতাংশ মানুষ। সাড়ে ৫৩ শতাংশ মানুষ পেয়েছেন দু’টি টিকা।
হু-র সিনিয়র উপদেষ্টা, ভ্যালেন্সিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হোসে মার্টিন-মোরেনো বলেছেন, “ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে আমি চমকে গিয়েছি। গভীর উদ্বিগের মতো বিষয়। কেন তড়িঘড়ি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল আমার মাথায় ঢুকছে না। ব্রিটেনে টিকাকরণ তাও কিছুটা হয়েছে। কিন্তু বহু দেশেই টিকাকরণের ছবিটা গভীর নৈরাশ্যের। সে ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হয়ে উঠতে চলেছে।”