ছবি: এএফপি
রাজনীতিতে ঘোড়া-কেনাবেচার চেয়ে ঘোটক-কূটনীতিতেই ভরসা রাখলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ।
তিন দিনের সফরে চিনে এসে প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের মন জয় করতে অভিনব পন্থা নিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাকরঁ। ‘ফ্রেঞ্চ রিপাবলিকান গার্ড’-এর একটি ভাল জাতের ঘোড়া উপহার দিলেন তাঁকে। সোমবার চিনের শিয়ান প্রদেশে (যেটি সুপ্রাচীন সিল্ক রোডের সঙ্গে সংযোগকারী) প্রথম পা রাখেন মাকরঁ। এখানকার টেরাকোটা আর্মি ঘুরে দেখেন স্ত্রী ব্রিজিতের সঙ্গে। চিন-ফরাসি সম্পর্ক ফিরে দেখা এবং ভবিষ্যতে কী ভাবে এগোনো হবে, সে আলোচনাও সারবেন মাকরঁ।
চিনফিংয়ের কাছে যে বাদামি ঘোড়াটি অনেকটা পথ পেরিয়ে হাজির হয়েছে, তার নাম ভিসুভিয়াস। বয়স আট। চিনা প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছনোর আগে তাকে প্রচুর কড়া পরীক্ষার বাধা পেরোতে হয়েছে। বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে খোদ ফরাসি প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত সেনাদল থেকে ভিসুভিয়াসকে আনা হয়েছে। সারা উড়ানে তার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখা হয়েছে। ফরাসি রাজনীতিতে এর আগে এমন ঘোটক-কূটনীতির নজির নেই বলেই দাবি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। ঘোড়া পেয়ে চিনা প্রেসিডেন্ট যারপরনাই খুশি বলে জানান এক আধিকারিক।
২০১৪ সালে শি যখন প্যারিস সফরে গিয়েছিলেন, তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন ১০৪ ঘোড়সওয়ার। তাঁদের দেখে মুগ্ধ হয়ে যান চিনা প্রেসিডেন্ট। সেই স্মৃতি মাথায় রেখেই ঘোড়া উপহারের কথা ভেবেছেন তরুণ ফরাসি প্রেসিডেন্ট। কেউ কেউ আবার বলছেন, বেজিংয়ের ‘পান্ডা-কূটনীতির’ জবাবে এল ‘ঘোড়া-কূটনীতি।’ কিছু দিন আগে প্যারিসের কাছে একটি চিড়িয়াখানায় একটি পান্ডা এসেছিল চিন থেকে। মাকরঁ-র স্ত্রী ব্রিজিত তার ভার নিয়েছেন। এ বার ঘোড়া পাঠিয়ে সৌজন্য দেখালেন মাকরঁ। চিন সফরে ৫০ জন ব্যবসায়ীর প্রতিনিধিদল নিয়ে এসেছেন মাকরঁ। মূল উদ্দেশ্য, ফরাসি পণ্যের জন্য চিনা বাজারের বন্ধ দরজাটা খোলা।
নেপোলিয়নের পর মাকরঁ-র মতো তরুণ নেতা আর পায়নি ফ্রান্স। প্রথম থেকেই ৪০ বছরের এই প্রেসিডেন্ট চেষ্টা করেছেন ইতিহাস খুঁড়ে নানা অনুষঙ্গ ও প্রতীক ব্যবহার করে বিশ্বনেতাদের মন জয় করতে। গত বছর মে মাসেই তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনাস্থল হিসাবে বেছেছিলেন ভার্সাইয়ে প্রাক্তন রাজা চতুর্দশ লুই-এর প্রাসাদ। পুতিন যথেষ্ট অভিভূত হন তাতে। তার দু’মাস পরেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার যোগদানের শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে মাকরঁ আমন্ত্রণ জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। সে বার প্যারিসে বাস্তিল দিবসের সেনা মহড়া দেখেন ট্রাম্প। সব দেখেশুনে মাকরঁ-র দরাজ প্রশংসা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্টও।