ফাইল চিত্র।
হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু, দুই-ই ক্রমাগত বাড়ছে ইউরোপে। আগামী কিছু সপ্তাহে আরওই বাড়বে। এমনই সতর্কবার্ণী শোনাল ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজ়িজ় প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি)। একই পরিস্থিতি দক্ষিণ আফ্রিকারও। প্রতি দিন আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণ রোগী করোনা সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমণ ঘটছে মূলত ওমিক্রন স্ট্রেনে। ইউরোপে এখনও ডেল্টাই রাজত্ব করছে। তবে হয়তো দ্রুত তাকে সরিয়ে দিয়ে এখানেও মূল সংক্রামক স্ট্রেন (ডমিন্যান্ট) হয়ে উঠবে ওমিক্রন। ইসিডিসি-র ডিরেক্টর অ্যান্ড্রিয়া অ্যামন জানিয়েছেন, সংক্রমণ রুখতে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। যেমন, যেমন টিকা নেনি যাঁরা, তাঁদের জন্য লকডাউন জারি, রেস্তরাঁ, বার দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া, বাড়ি থেকে অফিসের কাজ বাড়ানো। কিন্তু তাতেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। ব্রাসেলসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে অ্যান্ড্রিয়া বলেন, ‘‘আগামী কিছু সপ্তাহে সংক্রমণ, হাসপাতালে ভর্তি, আইসিইউয়ে স্থানাভাব ও মৃত্যু, এই সবই বাড়বে।’’ এর মধ্যে কোভিড সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসায় কোয়রান্টিনে রয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস।
এ পর্যন্ত ইউরোপের ১৯টি দেশে মোট ২৭৪টি ওমিক্রন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ইসিডিসি জানিয়েছে, ওমিক্রন থেকে গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যুর খবর এখনও মেলেনি। কিন্তু এ থেকে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর সময়ও হয়নি। দ্রুত টিকাকরণ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া জোর দিচ্ছে ইউরোপ। কিন্তু সেই গতিও বেশ শিথিল। ইউরোপিয়ান হেল্থ কমিশনার স্টেলা কাইরিয়াকাইডস জানিয়েছেন, এই মহাদেশের অন্তত ৬টি দেশে টিকাকরণের হার ৫৫ শতাংশের নীচে।
ইউরোপে সব চেয়ে খারাপ হাল অস্ট্রিয়া, জার্মানি, পোল্যান্ড, রোমানিয়ার। ফের লকডাউন শুরু করেছে অস্ট্রিয়া। আজ এ দেশের সরকার জানিয়েছে, সপ্তাহান্তে লকডাউন তুলে দেওয়া হবে। তবে শুধুমাত্র যাঁরা টিকা নিয়েছেন, বা সদস্য কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠেছেন, তাঁদের জন্য এই স্বাধীনতা থাকবে। টিকা নেননি যাঁরা, তাঁদের ‘গৃহবন্দিই’ থাকতে হবে। পোলান্ডে ফের অনলাইন স্কুল চালু হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মী ও শিক্ষাকর্মীদের টিকাকরণ বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। এ দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়েস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আগের দিন এই সংখ্যাটা ছিল ১৭৫। কয়েক মাস আগেও দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমণ একেবারে কম ছিল, ফলে দিনে-দিনে সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় আতঙ্ক বাড়ছে। সংক্রমিতদের প্রায় সকলেই ওমিক্রন-আক্রান্ত। এ দেশে মূলত ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানের ‘আফ্রিকা হেল্থ রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর গবেষকেরা দাবি করেছেন, ওমিক্রন স্ট্রেনের ক্ষেত্রে ফাইজ়ারের টিকা অনেকটাই কম কাজ দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থাটির দাবি, দু’টি ডোজ়ে কাজ কম দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কার্যকারিতা কমছে না। তিনটি ডোজ় নিলে সংক্রমণ আটকে দেবে এটি।