নেদারল্যান্ডসের রটারডামের ঐতিহাসিক সেতু ‘ডি হেফ’ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কারণ তার নীচ দিয়ে যাবে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের বিলাসবহুল প্রমোদতরী। উচ্চতার কারণে সেতুতে আটকে যাবে সেই প্রমোদতরী। তাই সেতুটিকে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিলাসবহুল ওই প্রমোদতরীটি তৈরি করেছে ডাচ সংস্থা ওশানকো। গত বছর সংস্থাটির সঙ্গে যুক্ত হন বেজোস। ওই প্রমোদতরীটি নির্মাণে ঠিক কত খরচ হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
রটারডাম শহরের দুই অংশের সংযোগকারী সেতুটি স্থানীয় ভাবে ‘ডি হেফ’ নামে পরিচিত। সরকারি ভাবে সেতুটির নাম 'কোনিংশ্যাভেন'। ইস্পাতের তৈরি সেতুটির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এটি বর্তমানে দেশের জাতীয় স্মারক।
১৮৭৭ সালে সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ১৮৭৮ সালে সেতুটি আনুষষ্ঠানিক ভাবে চালু হয়। জাহাজ চলাচলের সুবিধার জন্য প্রথম দিকে সেতুটিকে প্রয়োজন মতো ঘোরানো যেত। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে ১৯২৭ সালে একে ‘লিফট ব্রিজ’ হিসাবে তৈরি করা হয়। ১৯৪০সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির বোমাবর্ষণে ব্যাপক ক্ষতি হয় সেতুটির।
কেন ভেঙে ফেলা হবে ওই ঐতিহাসিক সেতুটি? জানা গিয়েছে, বোজেসের প্রমোদতরীর উচ্চতা ৪১৭ ফুট বা ১২৭ মিটার। কিন্তু এই উচ্চতার জলযান সেতুটির নীচ দিয়ে যেতে পারবে না। তাই প্রশাসন তাকে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কারণ সম্প্রতি সেতুটির সংস্কার করা হয়। এর জন্য ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সেতুটিতে যান চলাচল বন্ধ ছিল। সেই সময় শহরের প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, সেতুটিকে ভাঙা হবে না।
রটারডাম শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই সেতুটি শহরের দু’টি অংশকে সংযুক্ত করে। ফলে সেতুটি শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেতুটি বন্ধ থাকলে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে শহরবাসীকে।
সেতু ভাঙা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর শহরের মেয়রের দফতরের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, সেতুটিকে পাকাপাকি ভাবে ভেঙে ফেলা হচ্ছে না। বেজোসের প্রমোদতরীটি সমুদ্রে চলে যাওয়ার পর ফের নির্মাণ করে দেওয়া হবে। সেই নির্মাণের খরচ দেবে প্রমোদতরী নির্মাণকারী সংস্থা ওশানকো।
কিন্তু প্রশ্ন হল, সেতুটি কি আগের মতোই তৈরি হবে? এর উত্তরে মেয়রে দফতর থেকে জানানো হয়েছে, ঠিক আগের মতো করেই সেতুটি তৈরি করে দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে আরও বলা হয়েছে, সেতুটি পুনর্নির্মাণের সময় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সেই ভাবনাও রয়েছে সেতুটি ভেঙে ফেলার পিছনে।
কিন্তু ‘ডি হেফ’সেতুটির তলা দিয়ে কেন যেতে হচ্ছে বেজোসের প্রমোদতরীকে? কারণ সেটি নির্মাণ হচ্ছে ওই সেতুর নিকটবর্তী একটি কারখানায়। তার পর সেতুর নীচে দিয়ে তাকে ভাসানো হবে সমুদ্রে।