প্রতীকী ছবি।
জার্মানি, ইটালি, ফ্রান্স ও বেলজিয়াম পরিবৃত ইউরোপের ছোট্ট একটি দেশ। বেশ কয়েক বছর আগে চাকরি সূত্রে এসেছিলাম এখানে। তার পর থেকে আমরা এই ঝকঝকে সুন্দর দেশটির বাসিন্দা। সারা বছর এখানকার আবহাওয়া বেশ মনোরম। আর এই সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা মনে করিয়ে দেয়, সুদূর বাংলায় শারদোৎসবের সময় এসে গিয়েছে। কিন্তু ইউরোপের এই ছোট্ট দেশটিতে বসে দুর্গাপুজোর সেই অবিস্মরণীয় স্বাদ গ্রহণ করার সুযোগ কোথায়! সেই সাধপূরণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই আমরা ২০১৯ সালে কয়েক জন লুক্সেমবার্গবাসী শুরু করেছিলাম ‘লুক্স উৎসব’, অর্থাৎ ‘লুক্সেমবার্গ দুর্গোৎসব’।
এটা আমাদের দুর্গাপুজোর তৃতীয় বর্ষ। গত বছর অতিমারি পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিলাম, অবশ্যই সমস্ত বিধিনিষেধ মেনেই। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছরও আমরা আয়োজন করেছি মা দুর্গার আবাহনের। পুজোর কয়েকটা দিন একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান— সব কিছুরই প্রস্তুতি তুঙ্গে। বন্ধুদের মধ্যে কেউ নিয়েছেন পুরোহিতের দায়িত্ব, কেউ মণ্ডপ সজ্জার, কেউ বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। গত দু’বছর ধরে দেখছি, দুর্গাপুজো ঘিরে এখানকার স্থানীয়, অভারতীয় মানুষজনেরও বেশ কিছুটা উৎসাহ রয়েছে। তাই পুজোর প্রসাদে সন্দেশ-নারকেল নাড়ুর সঙ্গে স্থান পাবে চকলেটও!
আমরা জানি সারা পৃথিবী এখন অতিমারিতে জর্জরিত! সতর্কতা মেনে আমরাও আরাধনা-উৎসবের লাইভ সম্প্রচারের আয়োজন করার প্রস্তুতি নিয়েছি। অন্যান্য বছরের মতো এই উৎসবেও পরিবেশিত হবে গীতি-আলেখ্য, নৃত্যানুষ্ঠান ও নাট্যাভিনয়। পুজোয় যাঁরা আসবেন, তাঁদের প্রত্যেকের বৈধ ‘ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট’ থাকতে হবে। যদি কেউ আগে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে তাঁর থাকতে হবে ‘রিকভারি সার্টিফিকেট’, অর্থাৎ সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার শংসাপত্র। সরকারি নির্দেশিকা মেনে এই ধরনের বৈধ শংসাপত্র দেখ়ালেই দর্শনার্থীদের মণ্ডপে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
আমরা চেষ্টা করছি, কয়েক দিনের জন্য এক টুকরো বাংলাকে এখানে তুলে আনতে। জমজমাট আনন্দানুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ছোটদের জন্য থাকছে নাচ-গান-আবৃত্তির সুযোগ। আর বড়দের জন্য? অবশ্যই গুণী সদস্যদের নাচ-গান-নাটকের জমজমাট অনুষ্ঠান। পুরো অনুষ্ঠানটির লাইভ টেলিকাস্ট হবে অনলাইনে।
দেশের বন্ধুদের বলব— আপনারা সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর করোনা-বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলুন। আমরা জানি, এক দিন ঠিক এই দুর্যোগ কেটে যাবে। আমরা সবাই আবার কোনও বিধি-নিষেধ ছাড়াই আনন্দ-উৎসব পালন করতে পারব।
ঠিক আগের মতো!