প্রতীকী ছবি।
বহু বছর দেশের বাইরে থাকলেও, এখানে যখন গাছের পাতাগুলো আস্তে আস্তে লাল আর সোনালি হতে থাকে, হাওয়ায় আসে একটু ঠান্ডার আমেজ, তখন যেন ফিরে যাই সেই ছোটবেলার সেপ্টেম্বর মাসের কলকাতায়, আর মনটা নেচে ওঠে। হাওয়ায় পুজোর গন্ধ, নীল আকাশে একটু-আধটু সাদা ফুরফুরে মেঘ, নতুন জামাকাপড়, কত আশা, কত প্রতীক্ষা। তার পরেই হুড়মুড় করে এসে যাবে পুজো। নাচগানের রিহার্সাল, শাড়ি পরে অঞ্জলি দেওয়া, শারদীয়া আনন্দমেলা, দেশে ফেলুদার নতুন অ্যাডভেঞ্চার, রাতভর ঠাকুর দেখা— কত সুখস্মৃতি।
এখন মেঘে মেঘে বেলা হয়েছে। ছেলেমেয়েরা কলেজে, কেউ বা চাকুরিরত। এখন আবার সময় বাইরে আকাশ দেখার। আর তাই বন্ধুদের সঙ্গে পুজোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা। পুজোর হাওয়া সর্বত্র। আর গত বছর ছিল অতিমারি। তাই এ বছর উৎসাহ যেন আরও বেশি। পুজোর অঞ্জলি দেওয়া, সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া, শাড়ি পরে সেলফি তোলা— পুজোর এই সপ্তাহান্তের জন্য আমরা সারা বছর বসে থাকি। এ বার সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়ায় উত্তেজনা তুঙ্গে— সব বন্ধুরা মিলে ‘প্রথমার প্রথম পুজো’র আয়োজন করছি। এই পুজো একেবারে সেই ছোটবেলার পাড়ার পুজোর মতো হবে। আমাদের সিলিকন ভ্যালিতে লাগবে সাবেক বাংলার ছোঁয়া।
সবারই দিনের বেলা অফিস, তার সঙ্গে সঙ্গেই পুজোর পরিকল্পনা আর সন্ধেবেলা জ়ুম মিটিং চলছে। মনটা সেই নব্বইয়ের দশকের কলকাতায় পড়ে থাকলেও এখন আমরা সকলেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে অভ্যস্ত। হোয়াটস্যাপে প্ল্যানিং, জ়ুমে প্রাক্টিস আর আলোচনা চলছে জোরকদমে। এরই মধ্যে এক জন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সুন্দর একটি আগমনী গানের ভিডিয়ো বানিয়ে ফেললেন, ইতিমধ্যেই ফেসবুকে সেটার এক লক্ষেরও বেশি ভিউজ়! নতুন প্রজন্মের নতুন সব প্রযুক্তি, আর তার সঙ্গেই সাবেকি চিরাচরিত পুজোর জোগাড়, ভোগ রান্না, প্রসাদের ফল-নৈবেদ্যর ব্যবস্থা। এক দিদি কলকাতা গিয়েছিলেন। তাঁকে দিয়ে পুজোর সামগ্রী আনানো হয়েছে, পুজোর ফুল সান ফ্রান্সিসকো ফ্লাওয়ার মার্কেটে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। থাকবে সন্ধিপুজোর ১০৮ পদ্ম ফুলও— সব আয়োজনই যেন ঠিক মতো হয়। ডেকরেশন কমিটি এক বিশাল স্টেজ বানিয়ে ফেলেছে, প্রশস্ত কাঠের পাটাতনে তিনশোটা পায়া! চলছে সন্ধিপুজোর পরে ধুনুচি নিয়ে ‘ফ্ল্যাশ মব-ডান্সের’ প্র্যাক্টিস। কালচারাল টিমের নাচ, গান, নাটক, কুইজ় প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি তো চলছেই। হঠাৎ মাথায় এল— এ বার দেবীর বোধন মেয়েরা করলে কেমন হয়? নারীশক্তির আগমন নারীদের হাতেই হোক। যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। শুরু হয়ে গেল গান, সংস্কৃত মন্ত্রপাঠ প্র্যাক্টিস করা— যাতে উচ্চারণটা যেন ঠিক মতো হয়।
আশা করে আছি, অতিমারিতে বহু দিন না-দেখা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দারুণ জমবে। কলকাতার রাস্তায় আমরা যেমন চাউমিন আর বিরিয়ানি খেতাম, এখানেও তার পরিকল্পনা চলছে। সব মিলিয়ে নানা আধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার করে এক অভিনব সাবেকি পুজোর অভিজ্ঞতা হবে বলে মনে হচ্ছে।
এত বছর এ দেশে রয়েছি, পুজো নিয়ে এত উত্তেজনা কখনও হয়নি। মনে হচ্ছে, আবার যেন সেই ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছি। প্রথমার শক্তি সকলকেই টানছে এ বছর।