ক্রোয়েশিয়ার দক্ষিণে অ্যাড্রিয়াটিক সমুদ্রের পাড়ে ছোট শহর দুব্রভনিক। ভূমধ্যসাগরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল এই শহর।
২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী এর মোট জনসংখ্যা ৪২ হাজার ৬১৫। ১৯৭৯ সালে ইউনেস্কোর বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় ঢুকে পড়েছে এই সমুদ্র শহর।
বিশ্বের অন্যতম দূষণমুক্ত শহর দুব্রভনিক। দুব্রভনিককে দূষণমুক্ত করে তুলেছে এই শহরের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য। এই শহরে একটিও গাড়ি চলে না। পুরো শহরটাই পায়ে হেঁটে ঘুরতে হয়!
শহরের আদি বাসিন্দা থেকে পর্যটক, সকলেই পায়ে হেঁটে ছোট এই শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়ান।
সাতের শতকে শহরটির নাম ছিল রাগুসা। দুব্রভনিকের ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে এপিডাওরাম নামে একটি প্রাচীন গ্রিক কলোনি। সেখান থেকে শরণার্থীরা এসে রাগুসা শহরটি গড়ে তোলেন।
আগে শহরটি বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। পরে ভেনিস প্রজাতন্ত্রের অধীন হয়।
১৬৬৭ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয় দুব্রভনিকে। যাতে প্রায় পুরো শহরটিই ধ্বংস হয়ে যায়। ৫ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
এর পর দ্বিতীয় বড় আঘাত নেমে আসে ১৯৯১ সালে। ক্রোয়েশিয়ার মুক্তিযুদ্ধের সময় যুগোশ্লাভিয়ার সেনা ৭ মাসের জন্য দখল করে নেয় এই শহর। দু’পক্ষের লাগাতার বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় শহরটি।
সেনার জবরদখল থেকে মুক্তি পেয়ে শহরের সংস্কারের পর জনপ্রিয় পর্যটকস্থল হয়ে ওঠে শহরটি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই শহর বহু ঝড় সামলেছে। শহরের চারপাশের শক্ত প্রাচীর অনেক বিপদ থেকে রক্ষাও করে আসছে প্রাচীন কাল থেকেই।
এই প্রাচীরও ঘুরে দেখার অন্যতম আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে। চিনের প্রাচীরের মতো দুব্রভনিকের এই প্রাচীরের ভিতর দিয়েও হেঁটে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। কোথাও কোথাও প্রাচীরটি ১৩ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত চওড়া।
প্রাচীন এই শহর সিনেমার শ্যুটিংয়ের জন্যও ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সমুদ্র, পুরনো ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট সব মিলিয়ে প্রাচীন রাজাদের ফিল্মের জন্য আদর্শ।
জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’-এর শ্যুটিং এই সমুদ্র শহরেই হয়েছিল। দুব্রভনিকের প্রাচীর, দুব্রভনিকের পাথরের রাস্তা, ঘর-বাড়িও ‘গেম অব থ্রোনস’-এ দেখানো হয়েছিল।