মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।—ছবি রয়টার্স।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম ভারত সফরে আসছেন ২৪ তারিখ। দু’দিনের এই সফরে নয়াদিল্লি ছাড়াও আমদাবাদে ‘কেমছো ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। সূত্রের খবর, এই সফরেই আমেরিকার কাছ থেকে ক্ষেপনাস্ত্র-প্রতিরোধী সামগ্রিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে চলেছে ভারত। তবে গত কয়েক বছর ধরে যে চেষ্টা চলছে, সেই ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত রূপ পাবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আজ ট্রাম্পের সফরসূচি ঘোষণা করেছে বিদেশ মন্ত্রক। বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে দু’দেশের সম্পর্ক আরও পরিণত হয়েছে। বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, সন্ত্রাস-বিরোধিতা, শক্তি ক্ষেত্র, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিতে সমন্বয়ের মতো বিষয়গুলিতে লক্ষ্যণীয় উন্নতি ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলিকে খতিয়ে দেখা এবং আরও শক্তিশালী করার সুযোগ পাওয়া যাবে।’ ট্রাম্পের সঙ্গে আসছেন তাঁর স্ত্রী মেলিনিয়াও।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ভারত সফর ঘোষণার দিনই মোদী সরকারের উপর চাপ বাড়িয়ে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন একটি ব্লগ লিখে প্রস্তাবিত ভারত মার্কিন বাণিজ্য চুক্তির কড়া সমালোচনা করেছেন। পূর্ণাঙ্গ চুক্তি দূরস্থান, ছোট মাপের একটি বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনাও যে ক্ষীণ, সে কথাই মহাজন বিস্তারিত ভাবে লিখেছেন তাঁর ব্লগে। বলা হয়েছে, ‘স্টেন্ট-সহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের উপর ভারতের আমদানি শুল্ক চাপানোর বিষয়টি আমেরিকাকে অখুশি করেছে। কারণ তার ফলে আমেরিকার সংস্থাগুলির লোকসান হচ্ছে। তারা বিপুল দামে ভারতের বাজারে সেগুলি বিক্রি করতে পারছে না। অন্য দিকে মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের মানুষ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। এই কারণেই ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আমেরিকা বিশেষ বিশেষ পণ্যে ছাড়া চাইছে। কিন্তু ভারত তা দিতে পারছে না, কারণ দেশের মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা, ঘরোয়া শিল্পের উন্নতি এবং অনেক ক্ষেত্রে ধর্মীয় স্বার্থেও।’
ট্রাম্প আসার আগে আগামিকাল এই চুক্তির জট ছাড়াতে দিল্লি আসছেন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটথিজার। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, বাণিজ্য সচিব অনুপ ওয়াধওয়ান-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ট্রাম্প চান, আমেরিকার কৃষি এবং ডেয়ারি পণ্যের জন্য নরেন্দ্র মোদী ভারতের বাজার আরও বেশি করে খুলে দিন। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব আপাতত তাতে নারাজ। ট্রাম্প চাইছেন, মোদী সরকার হৃৎপিণ্ডের স্টেন্টের দামের যে ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে, তা তুলে নেওয়া হোক। তাতে মার্কিন সংস্থার ফায়দা হলেও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়বে বলে সরকার তা করতে নারাজ। উল্টে মোদী সরকার চাইছে, ভারত থেকে রফতানি করা ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম থেকে বাড়তি শুল্ক তুলে নিন ট্রাম্প। এ দেশে কৃষি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের জন্য আরও বেশি করে মার্কিন বাজার খুলে দেওয়া হোক। এত বিষয়ে দর কষাকষির কারণে দোদুল্যমান হয়ে রয়েছে বাণিজ্য চুক্তি।
আগামিকাল থেকে শুরু হওয়া বাণিজ্য আলোচনা তাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি সূত্রের খবর, পূর্ণাঙ্গ চুক্তি শেষ পর্যন্ত করা না-গেলেও মোদী-ট্রাম্প প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠতা প্রদর্শনের পরে ‘মুখ রক্ষা’ করতে আমেরিকা ভারত থেকে রফতানি করা পণ্যে, আংশিক শুল্কছাড় দিতে পারে। ভারতও যে ২৮টি পণ্যে বাড়তি শুল্ক বসিয়েছিল, তা শিথিল করতে পারে।