এইচ-১বি ভিসা সংক্রান্ত কড়াকড়ি শিথিল করলেন ট্রাম্প— ফাইল চিত্র।
চাপের মুখে ওয়ার্ক ভিসা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার জারি করা সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে এইচ-১বি ভিসায় কাজ করতে আসা যে বিদেশি কর্মীরা নিজেদের দেশে ফিরে গিয়েছিলেন, তাঁরা সেই একই পদে কাজে ফেরত আসতে পারবেন। ট্রাম্প সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকায় তথ্যপ্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে কমর্রত ভারতীয়রা উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন বিদেশমন্ত্রকের নয়া নির্দেশিকা বলছে, ‘সংশোধিত আইন অনুযায়ী, অনভিবাসী বিদেশি কর্মীরা যদি একই নিয়োগকর্তার কাছে ফিরে যেতে চান, তবে তাঁরা এইচ-১বি এবং এল-১ ভিসা পেতে পারেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিশেষত কোভিড-১৯ বা ক্যানসারের মতো ব্যাধির গবেষণায় যাঁরা যুক্ত আছেন তাঁরাও এই সুবিধা পাবেন। তাঁদের স্ত্রী বা স্বামীরাও আমেরিকায় ফিরতে পারবেন’। মার্কিন বিদেশমন্ত্রক জানাচ্ছে, নতুন করে কর্মী নিয়োগের পথে হাঁটতে হলে নিয়োগকারী সংস্থাগুলির উপর আর্থিক চাপ বেড়ে যেত। সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত।
গত ২২ জুন ট্রাম্প সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, বছরের শেষ পর্যন্ত আর কোনও রকম এইচ-১বি, এইচ-৪, এল-১ এবং জে-১ ভিসা দেওয়া হবে না। পাশাপাশি, দেশে ফিরে যাওয়া বিভিন্ন ওয়ার্ক ভিসা-ধারীদের আমেরিকায় ফেরাও বন্ধ করা হয়েছিল। ফলে করোনা পরিস্থিতিতে আমেরিকা থেকে নিজেদের দেশে ফিরে আসা এইচ-১বি বা সমগোত্রীয় ভিসা-ধারী কর্মীদের ‘ভবিষ্যৎ’ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। সে সময় ট্রাম্পের যুক্তি ছিল, লকডাউনের জেরে কাজ হারানো মার্কিন নাগরিকদের চাকরির ব্যবস্থা করতেই এইচ-১বি-সহ কয়েকটি ভিসা নীতি কড়া করা হয়েছে।
তবে কেন এবার ভিসা নীতি শিথিল করলেন ট্রাম্প? আলোচনায় উঠে আসছে মূলত দু’টি কারণ।
আরও পড়ুন: মা ভারতীয় বিজ্ঞানী, ইতিহাসের দরজায় দাঁড়ানো কে এই কমলা হ্যারিস?
প্রথমত, করোনাভাইরাসের অভিঘাতে ইতিমধ্যেই ধস নেমেছে মার্কিন অর্থনীতিতে। এই পরিস্থিতিতে জুন মাসে ট্রাম্পের ভিসা-বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল মার্কিন চেম্বার অব কমার্স-সহ আমেরিকার বিভিন্ন শিল্প গোষ্ঠী। প্রেসিডেন্টকে চিঠি লিখে তারা জানিয়েছিল, সমস্ত ওয়ার্ক ভিসা বন্ধ রাখলে মার্কিন অর্থনীতিতে আরও গভীর প্রভাব পড়বে। তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি, ফাইনান্স এবং হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি-ও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।
দ্বিতীয়ত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে খুব বেশি কড়াকড়ি করলে এশীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের ভোট পুরোপুরি হারাতে পারে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টি। ইতিমধ্যেই কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ঘোষণা করে এশীয় বশোদ্ভূতদের ভোটের বড় অংশ নিশ্চিত করে ফেলেছেন ট্রাম্পে ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন। নভেম্বরের নির্বাচনে জিতে তিনি প্রেসিডেন্ট হলে আমেরিকায় কাজ করার জন্য বিদেশি নাগরিকদের আবার এইচ-ওয়ান বি ভিসা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বাধ্য হয়েই তাই ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আরও পড়ুন: প্রণব এখনও ভেন্টিলেশনে, হৃদ্যন্ত্রের কাজ, রক্ত সঞ্চালন, রক্তচাপ স্থিতিশীল
তবে আমেরিকায় যাঁরা প্রথম চাকরি করতে যাবেন, তাঁদের এইচ-১বি ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও কড়া অবস্থান বজায় রেখেছে ট্রাম্প সরকার। চলতি মাসের গোড়াতেই এ সংক্রান্ত একটি সরকারি আদেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সই করেছেন। ট্রাম্পের নয়া নীতি কার্যকর হলে এইচ-১বি ভিসায় বিদেশি নিয়োগের প্রক্রিয়া জটিল হয়ে যাবে। পাশাপাশি, ভিসায় কর্মরত বিদেশিদের চুক্তি বাতিলও সহজ হবে মার্কিন নিয়োগকর্তার।