লন্ডন ছোঁয়ার আগেই ট্রাম্পের তোপ মেয়রকে

তাঁর টুইট, ‘‘লন্ডনের মেয়র হিসেবে সব দিক থেকেই খুব খারাপ কাজ করেছেন উনি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আসছেন শুনে বোকার মতো খারাপ ব্যবহার করে চলেছেন অথচ ব্রিটেন আমেরিকার অন্যতম মিত্র দেশ। উনি একেবারে হেরো একটা লোক। আমার দিকে নজর না দিয়ে লন্ডনের অপরাধ দমনের বিষয়টি খেয়াল করা উচিত ওঁর।’’

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯ ০২:২৩
Share:

অভ্যর্থনা: বাকিংহাম প্রাসাদে রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের সঙ্গে আলাপচারিতায় সস্ত্রীক ট্রাম্প। সোমবার। এপি

এয়ার ফোর্স ওয়ান লন্ডনের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরের মাটি ছোঁয়ার আগেই ফের বিস্ফোরক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তড়িঘড়ি টুইট করে মেয়র সাদিক খানের কড়া সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ট্রাম্প। সাদিককে ‘একেবারে হেরো একটা লোক’ বলে আক্রমণে নেমেছেন প্রেসিডেন্ট। এখানেই না থেমে সাদিককে অকপটে সম্বোধন করেছেন ‘বোকা’, ‘খারাপ’ ‘খর্বকায়’ ইত্যাদি বলেও।

Advertisement

প্রেসিডেন্টের দাবি, লন্ডনের মেয়র সাদিক ‘ভয়ঙ্কর খারাপ’ কাজ করেছেন। তাঁর টুইট, ‘‘লন্ডনের মেয়র হিসেবে সব দিক থেকেই খুব খারাপ কাজ করেছেন উনি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আসছেন শুনে বোকার মতো খারাপ ব্যবহার করে চলেছেন অথচ ব্রিটেন আমেরিকার অন্যতম মিত্র দেশ। উনি একেবারে হেরো একটা লোক। আমার দিকে নজর না দিয়ে লন্ডনের অপরাধ দমনের বিষয়টি খেয়াল করা উচিত ওঁর।’’

সাদিক খান গত কাল একটি পত্রিকায় লিখেছিলেন, ‘‘ক্রমশ বাড়তে থাকা বিশ্বজনীন বিপদের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবচেয়ে ভয়ঙ্কর উদাহরণ।’’ যা জানার পরে আবার এক প্রস্ত চটে গিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সাদিকের মতে, আমেরিকার সঙ্গে ব্রিটেনের সুসম্পর্ক রাখা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু তার জন্য ট্রাম্পকে অভিবাদন জানাতে ‘লাল কার্পেট বিছিয়ে দেওয়ার’ কোনও দরকার ছিল না। ট্রাম্পকে তিনি ‘বিশ শতকের ফাসিস্ত’ বলেও সমালোচনা করেছেন। যার জবাবে ট্রাম্পের পাল্টা টুইট, ‘‘খানকে দেখে আমার নিউ ইয়র্কের ‘বোকা’ এবং ‘অযোগ্য’ মেয়র ডি ব্লাসিয়ো-র কথা মনে পড়ে যায়। উনিও খুব খারাপ কাজ করেছেন। তবে ওঁর তুলনায় সাদিক উচ্চতায় অর্ধেক।’’ লন্ডনের মেয়রের উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। সাদিক খানের তরফে তাঁর মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘ট্রাম্পের ওই টুইটকে ‘ছেলেমানুষি অপমান’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রেসিডেন্ট পদাধিকারীর মুখে এ কথা মানায় না।’’

Advertisement

রবিবার রাতে ওয়াশিংটন থেকে এয়ার ফোর্স ওয়ানে উঠে সোমবার সকালে লন্ডন পৌঁছন সস্ত্রীক ট্রাম্প। তিন দিনের এই সফরে বিমানবন্দরে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানোর জন্য হাজির ছিলেন বিদেশমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। সেখানেও তাঁর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাদিক খানকে নিয়ে কথা হয় বলে পরে জানিয়েছেন জেরেমি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ধরে নিন হোয়াইট হাউসে উনি (সাদিক খান) আগামী দিনে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন না।’’

রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের মুখে পড়তে পারেন, এই আশঙ্কায় পূর্বপরিকল্পনামতোই কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ট্রাম্পকে বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডনে মার্কিন দূতের রিজেন্ট পার্কের বাড়ি ‘উইনফিল্ড হাউস’-এ। সেখান থেকে আবার দুপুর ১২টা নাগাদ তিনি স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে উড়ে যান বাকিংহাম প্রাসাদের উদ্দেশে। রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ, প্রিন্স চার্লস, প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে দেখা হয় ট্রাম্প দম্পতির। হাসিমুখে ট্রাম্পকে অভ্যর্থনা জানান রানি। সেখানেই মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন ট্রাম্প। কামান দেগে এবং শূন্যে গুলি ছুড়ে স্বাগত জানানো হয় সস্ত্রীক প্রেসিডেন্টকে। মেলানিয়ার পরনে ছিল নেভি ব্লু রঙের কলারওয়ালা সাদা ড্রেস। সঙ্গে ছিল মানানসই জুতো এবং টুপি। ট্রাম্পের পরনে ছিল নীল স্যুট ও প্যান্ট। রাজপ্রাসাদে ঢোকার আগে আর একটি বিতর্কও মিটিয়ে নিতে চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট। গত কাল প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী ডাচেস অব সাসেক্স মেগানকে ‘খারাপ’ বললেও আজ সে কথা উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ওই মন্তব্যের জন্য তিনি কি রাজপরিবারের কাছে ক্ষমা চাইবেন? ট্রাম্পের উত্তর, ‘‘ না না, আমি তো কোনও মন্তব্যই করিনি।’’

ট্রাম্প-কন্যা ইভাঙ্কা আর স্বামী জ্যারেড কুশনারও গিয়েছেন বাকিংহামে। সেখানকার জানলায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁদের। সেখানকার বাগানেই তখন সস্ত্রীক ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হচ্ছিল।

এই মধ্যাহ্নভোজের পরে বাকিংহাম প্রাসাদেরই নানা ছোটখাটো অনুষ্ঠান সেরে সেখানে সন্ধে সাতটা নাগাদ ‘স্টেট ব্যাঙ্কোয়েট’-এ যোগ দেন ট্রাম্প। সেখানে আমন্ত্রিতদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। তবে সাদিক খানের পাশাপাশি লেবার পার্টিও বয়কট করছে এই নৈশভোজ।

আগামিকাল ট্রাম্পের দেখা করার কথা বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র সঙ্গে। তবে তাঁদের আলাদা করে কথা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। থাকবেন অন্য মন্ত্রীরাও। কালই মধ্য লন্ডন জুড়ে বড়সড় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হওয়ার কথা। গত বছরের মতো এ বারও আকাশে উড়বে রাগী ট্রাম্পের আদলে বানানো ন্যাপি পরা ২০ ফুট লম্বা ‘বেবি ট্রাম্প বেলুন।’ জলবায়ু পরিবর্তনকে স্বীকারই করেন না বলে ট্রাম্পের উপরে ক্ষিপ্ত লন্ডনের জনতার একটা বড় অংশ। প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে ট্রাম্পের দেখা হলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রসঙ্গ উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement