Imran Khan

‘ওয়াশিংটনের ষড়যন্ত্রেই’ কি সরতে হয়েছিল ইমরানকে

পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হারের পরে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৩ ০৮:০৫
Share:

ইমরান খান। —ফাইল চিত্র।

একটি গোপন কেবল। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ক্ষমতা হারানোর কারণ লুকোনো রয়েছে সেই কূটনৈতিক ‘সাইফার’-এ। বহু আগেই এ কথা দাবি করেছিলেন ইমরান। এ বারে আমেরিকার একটি সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গত বছর ওয়াশিংটনের অঙ্গুলি হেলনেই ক্ষমতা হারাতে হয়েছিল ইমরানকে। তার প্রমাণ রয়েছে ওই গোপন বার্তা ‘সাইফার’-এ।

Advertisement

পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হারের পরে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান। তিনি সে সময়ে দাবি করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর দফতরে থাকতেই তিনি সাইফার-এর কথা জানতে পেরেছিলেন। এ-ও দাবি করেছিলেন, তাঁকে সরানোর জন্য আমেরিকাই ষড়যন্ত্র করেছিল। পাক সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলির সাহায্যে তাঁকে সরিয়েছিল আমেরিকা। পরে অবশ্য নরম হতে শোনা যায় ইমরানকে। বলেছিলেন, আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করতে চান তিনি। যদিও এ-ও দাবি করতে থাকেন, তাঁর উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাবাহিনী চক্রান্ত করে তাঁকে পদ থেকে সরিয়েছেন। বর্তমানে তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলবন্দি ইমরান। তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। অন্তত পাঁচ বছর রাজনীতি থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে ইসালামাবাদ হাই কোর্ট। ইমরান তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, নির্বাচনে তিনি যাতে অংশ নিতে না পারেন, তার জন্যই এই ‘ব্যবস্থা’ করা হয়েছে।

বুধবার একটি আমেরিকান সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে ফের খবরে উঠে এসেছে ‘ষড়যন্ত্র’ প্রসঙ্গ। ওই রিপোর্টে ‘সাইফার’-এ থাকা আমেরিকায় পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ ও আমেরিকার ‘ব্যুরো অব সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স’-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু-র কথোকথন প্রকাশ করা হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইমরানের মস্কো সফরের দু’সপ্তাহ পরে ওই বৈঠক হয়েছিল। উল্লেখ্য, ২৪ ফেব্রুয়ারিই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল রাশিয়া। মস্কোর ইউক্রেন-আক্রমণ নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিলেন ইমরান। শোনা যায়, এই দুই ঘটনায় ভয়ানক ক্ষুব্ধ হয়েছিল আমেরিকা। পাকিস্তানের উদ্দেশে গোপনে বার্তা গিয়েছিল, যেন তেন প্রকারে ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। লু ও মাজিদের বৈঠকে আমেরিকান কর্তা বলেছিলেন, ‘‘ইমরানের রাশিয়া সফর ও ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের একরোখা নিরপেক্ষ অবস্থান দেখে আমেরিকা ও ইউরোপ খুবই চিন্তিত।’’

Advertisement

সূত্রের খবর, লু-র সঙ্গে হওয়া কথাবার্তা ‘সাইফার’-এ করে ইসলামাবাদে পাঠিয়েছিলেন মাজিদই। সেটি ফাঁস হয়ে যায়। ইমরানের মুখেই প্রথম সাইফার-এর কথা শোনা গিয়েছিল। অভিযোগ, লু মাজিদকে বলেছিলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান) বিরুদ্ধে যদি একটা অনাস্থা ভোট সফল করা যায়, আমার মনে হয় ওয়াশিংটন সব মাফ করে দেবে। কারণ
রাশিয়া সফরের সিদ্ধান্ত উনিই নিয়েছিলেন। কিন্তু এটা না হলে ভবিষ্যতে একসঙ্গে হাঁটা কঠিন হবে।’’ আমেরিকান সংবাদ সংস্থাটির রিপোর্টে লেখা হয়েছে, এর এক মাস পরেই পাক পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট হয়েছিল। যার জেরে ক্ষমতা থেকে সরতে হয়েছিল ইমরান খানকে।

আমেরিকান রিপোর্টটির প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার জানান, ওই রিপোর্টে যা বলা হয়েছে, তাতে কিন্তু কোথাও এমন কিছু উল্লেখ নেই যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, আমেরিকা তা ঠিক করে দিয়েছে। তিনি এ-ও বলেছেন, ইমরানের রাশিয়া সফর নিয়ে আমেরিকা প্রকাশ্যেই নিন্দা করেছিল। মিলার বলেন, ‘‘মাজিদ যেটা বলেছিলেন, সেটাই বলছি। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমেরিকার নাক গলানোর যে অভিযোগ উঠছে, তা মিথ্যা। আগেও মিথ্যা বলা হয়েছিল, এখনও মিথ্যা বলা হচ্ছে।’’ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রানা সানাউল্লা আমেরিকান রিপোর্টটির সত্যতা খারিজ করে দিয়েছেন। পাক বিদেশ মন্ত্রক চুপ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement