শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেতনভোগী রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর ১০ হাজার ৭৮৯ জনের নাম প্রকাশ করল বাংলাদেশ সরকার। সোমবার বাংলাদেশের ৪৯তম স্বাধীনতা দিবস। রবিবার তার আগের দিন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এই তালিকা প্রকাশ করে জানান, পাকিস্তানি আমলের সরকারি নথি ও দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে এই নামগুলি মিলেছে। এটি প্রথম তালিকা। এর পরে আরও তালিকা তৈরি হচ্ছে। এ ভাবে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
মন্ত্রী জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে থাকা পাকিস্তান আমলের নথি থেকেই এই নামগুলি মিলেছে। মুসলিম লিগ, জামাতে ইসলামি, নেজামে ইসলামি, জামাতে ওলামা ইত্যাদি রাজনৈতিক দল পাকিস্তানের সহযোগী ছিল। তাদের কর্মীদের নিয়েই বেতনভোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও শান্তি কমিটি নামে কয়েকটি বাহিনী তৈরি করে পাক সেনা। তাদের সাহায্যে ন’মাসে অন্তত ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করে পাক হানাদাররা। দু’লাখ মহিলার সম্মানহানি করে। এই তালিকা গেজেট হিসেবে প্রকাশ করা হবে কি না এই প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী হক বলেন, ‘‘এখনই গেজেট প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে দেশবাসী চাইলে এবং সরকার মনে করলে গেজেট প্রকাশ করা যেতে পারে।’’ ১৯৭১-এর এপ্রিলে সেনাকে সাহায্য করতে রাজাকার বাহিনী গড়ে পাকিস্তান। আধাপুলিশ আনসার বাহিনীকে এর সঙ্গে মেলানো হয়। প্রথমে রাজাকার বাহিনীকে স্বাধীনতা-বিরোধী নেতাদের নিয়ে গঠিত শান্তি বাহিনীর অধীনে রাখা হলেও পরে তাদের আধাসামরিক বাহিনীর স্বীকৃতি দেয় পাকিস্তান। একই ধরনের আধাসামরিক বাহিনী ছিল আল-বদর ও আল-শামস। তবে সব বাহিনীকে রাজাকার বাহিনী বলা হত।
রাজাকারদের নামের তালিকা স্বাধীনতাপন্থীদের বরাবরের দাবি। শেখ হাসিনার সরকার এই তালিকা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ২০১২ সালে সংসদে তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম জানান, রাজাকারদের তালিকা সরকারের হাতে না থাকলেও খুলনায় আনসার বাহিনীর সদর দফতর থেকে ১৯৭১-এ বেতনভোগীদের একটি তালিকা মিলেছিল, যাতে প্রায় ৩০ হাজার রাজাকারের নাম ছিল। এর পরে গত ২৫ অগস্ট রাজাকারদের নামের তালিকা তৈরির কথা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রক। রবিবার তার প্রথম অংশ প্রকাশ হল। মন্ত্রী এ দিন বলেন, এই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলে বিচারে সুবিধা হবে।