প্রথমে অনলাইন ডেটিং সাইটে আলাপ। তার পর বন্ধুত্ব। তার পর ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে খুন। এই ভাবে একাধিক বিদেশি মহিলাকে খুন করে সে। অবশেষে ধরা পড়ে সে। সাইপ্রাসের ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম সিরিয়াল কিলারের সেই গল্প আপনাকে ভয় পাইয়ে দেবেই।
ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ সাইপ্রাসের বাসিন্দা নিকোস মেটাসাস। ৩৫ বছরের নিকোস ছিল সে দেশের সেনাবাহিনীর অফিসার। গত বছর তাকে মোট ১৭৫ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের আদালত।
দুই নাবালিকা-সহ সাত জন মহিলাকে খুন করার অপরাধে তাঁকে এই শাস্তি দিয়েছে সে দেশের আদালত। ২০১৬-র সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮-র অগস্টের মধ্যে সেই খুনগুলি করেছিল সে।
নিকোস খুন করে ফিলিপিন্সের তিন মহিলা ও এক নাবালিকা, নেপালের এক মহিলা ও রোমানিয়ার এক মা-মেয়েকে। এ ছাড়াও আরও ৩০ জনকে নিকোস ধর্ষণ করেছে বলে অনুমান পুলিশের। কিন্তু সেই অপরাধের প্রমাণ মেলেনি।
সেই সব খুনের ধরনগুলি ছিল একই রকম। বেছে বেছে বিদেশি মহিলাদের নিশানা বানিয়ে নৃশংস ভাবে খুন করত সে। কী ভাবে?
প্রথমে সে দেশের একটি ডেটিং সাইটের মাধ্যমে মহিলাদের সঙ্গে আলাপ জমাতো নিকোস। তার পর একটু বন্ধুত্ব গাঢ় হলেই শারীরিক সম্পর্কের জন্য আমন্ত্রণ জানাত। তাতে রাজি হলেই আটকে রেখে চলত ধর্ষণ। তার পর গলা টিপে বা মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলত ওই মহিলাদের। দুই মহিলাকে খুন করার পর তাঁদের মেয়েদেরও খুন করে নিকোস।
প্রথম দিকে ওই মহিলাদের খুনের কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। গত বছর ১৪ এপ্রিল মেরি রোজ টিবারসিও (৩৮) নামের ফিলিপিন্সের এক মহিলার দেহ একটি তামার খনির কাছের জলাশয়ে ভেসে ওঠে। তার কিছু দিন পরেই আরিয়ান পালানাস লোজানো (২৮) নামের অপর এক মহিলার দেহ পাওয়া যায় ওই জলাশয় থেকেই। প্রবল বৃষ্টির জেরেই ভেসে উঠেছিল ওই দুই দেহ।
তার পর ওই দুই মহিলার ব্যাপারে খোঁজ শুরু করে সে দেশের পুলিশ। তাতে দু’জনেরই অনলাইন অ্যাকাউন্টে নিকোসে সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ মেলে। নিকোসের সঙ্গে ওই মহিলাদের হওয়া কথাবার্তা দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের।
সন্দেহভাজন হিসাবে নিকোসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত। মারিকার ভালতেজ আরকুইলা নামের ৩১ বছরের ফিলিপিন্সের এক মহিলা ২০১৭ সাল থেকে নিঁখোজ ছিলেন। নিকোসকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ তাঁর দেহ সেনাবাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জের একটি কুয়ো থেকে উদ্ধার করে।
এর পর একে একে বাকি মহিলাদের মৃত্যুর কথাও জানতে পারে পুলিশ। উদ্ধার হয় একাধিক দেহ। ইতিমধ্যেই নিকোসকে সেনাবাহিনীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। খুনের পর কী ভাবে মহিলাদের দেহ সরিয়ে ফেলত, সে কথাও নিকোসের থেকে জানতে পারে পুলিশ।
এই সব খুনের ঘটনার সামনে আসতে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয় ভূমধ্যসাগরের ওই ছোট্ট দ্বীপে। শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। আদলতে নিকোস দোষ স্বীকার করে বলেছে, ‘‘আমি যা করেছি, তা আর ফিরিয়ে দিতে পারব না।’’ এমনকি নির্বিকার নিকোস মৃতদের পরিবারের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেয়।
তার পর তিন সদস্যের বিচারকের দল সাতটি খুনের জন্য যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করে নিকোসের। সে দেশের সরকারের তরফে ওই মহিলাদের পরিবারকে আট হাজার ৯০০ ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় সাত লক্ষ) করে দেওয়াও হয়।
নিকোসের মা ছিলেন বুলগেরিয়ান ও বাবা গ্রিক। তার ছয় ও নয় বছরের দু’টি সন্তানও আছে। যদিও বেশ কয়েক বছর আগেই স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছিল সে।