AstraZeneca-Oxford

স্বেচ্ছাসেবীদের করোনা টিকার ভুল ডোজ দিয়েও লুকিয়েছিল অক্সফোর্ড, ফাঁস হল রিপোর্টে

টিকার ভুল ডোজের প্রয়োগের ব্যাপারে সৎ হওয়া উচিত ছিল অক্সফোর্ডের, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

Advertisement

সংবাদসংস্থা

লন্ডন শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:৫৭
Share:

ডোজে ভুল করেছিল অক্সফোর্ড।

করোনা প্রতিষেধকের মানবদেহে পরীক্ষার প্রথম দিকে ১৫০০ স্বেচ্ছাসেবীকে ভুল ডোজ দিয়েছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তবে বিভ্রাটের শেষ এখানেই নয়। একটি রিপোর্ট বলছে, অক্সফোর্ড তাদের ভুল বুঝতে পেরেছিল টিকা পরীক্ষার দিন কয়েক পরেই। কিন্তু তারপরও ভুলের কথা স্বেচ্ছাসেবীদের স্পষ্ট করে জানায়নি তারা। বরং উল্টো বোঝানোর চেষ্টা করেছিল। একটি চিঠি দিয়ে তারা স্বেচ্ছাসেবীদের জানিয়েছিল করোনা টিকা নানারকম ডোজে কী ভাবে কাজ করে, তা যাচাই করতেই স্বেচ্ছাসেবীদের অন্যরকম ডোজ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা পরীক্ষার প্রধান ভারপ্রাপ্ত প্রফেসর অ্যান্ড্রু জে পোলার্ডের স্বাক্ষর করা সেই চিঠি সম্প্রতি সংবাদসংস্থা রয়টার্সের হাতে এসেছে। যা দেখে বিশ্বের চিকিৎসা নীতি বিশেষজ্ঞরা এক বাক্যে জানিয়েছেন, টিকার ভুল ডোজের প্রয়োগের ব্যাপারে সৎ হওয়া উচিত ছিল অক্সফোর্ডের। স্বেচ্ছাসেবীদের ভুলের কথা না জানিয়ে নীতিগত ভাবে ভুল পদক্ষেপ করেছে তারা।

ঘটনাটি ঘটে গত বছর জুন মাসে। ২৮ মে অক্সফোর্ড/ অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনা টিকার মানবদেহ পরীক্ষা শুরু হয়। রয়টার্সের হাতে আসা ওই চিঠির তথ্য বলছে স্বেচ্ছাসেবীদের যে ডোজ দেওয়ার কথা ছিল, তার অর্ধেক দেওয়া হয় প্রথম দফার পরীক্ষায়। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে স্বেচ্ছাসেবীদের মৃদু উপসর্গ দেখে সন্দেহ হয় গবেষকদের। খতিয়ে দেখে তাঁরা বুঝতে পারেন, ডোজে ভুল হয়ে গিয়েছে। দ্রুত ভুল শোধরানো হয়। সঠিক ডোজের প্রতিষেধক প্রয়োগের জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের নতুন একটি দলের উপর পরীক্ষা শুরু করেন গবেষকরা। নিয়ম অনুযায়ী, ভুল ডোজ দেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদেরও বিষয়টি জানানোর কথা ছিল। কিন্তু অক্সফোর্ড নিয়ম পুরোপুরি মানেনি। আগের স্বেচ্ছাসেবীদের দলটিকে চিঠি দিলেও, আসল ঘটনাটি গোপন করে যায় তারা।

Advertisement

সংবাদসংস্থা রয়টার্সের হাতে এসেছে সেই চিঠিটিই। তার বয়ানে অক্সফোর্ড স্বেচ্ছাসেবীদের জানিয়েছে, তাঁদের আলাদা ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে। এই ডোজ কর্তৃপক্ষ অনুমোদিতই। তবে অন্য আরেকটি স্বেচ্ছাসেবী দলকে বেশি ডোজের প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। যদি কখনও মনে হয়, তা হলে এই কম ডোজও টিকার জন্য ব্যবহার করা হতে পারে।

চিঠির এই বয়ান দেখে চিকিৎসানীতি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ‘পুরো বিষয়টিই বেশ জটিল ভাবে বলা হয়েছে’। স্বেচ্ছাসেবীদের যা জানানোর কথা ছিল, সেটাই বলেনি অক্সফোর্ড। তাদের বলা উচিত ছিল, ভুল ডোজ দেওয়া হয়েছে। তবে তাতে ক্ষতি নেই। আর দরকার পড়লে অক্সফোর্ডের তরফ থেকে যাবতীয় সাহায্য করা হবে। কিন্তু তা বলা হয়নি।

চিকিৎসানীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই স্বেচ্ছাসেবীরা সমাজের স্বার্থে করোনার টিকা পরীক্ষা করার জন্য নিজেদের দেহ ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন। সামান্য ভুল প্রাণঘাতী হতে পারে জেনেও। তাই তাঁদের প্রতিও সৎ হওয়াই কাম্য ছিল অক্সফোর্ডের।

অক্সফোর্ডের মুথপাত্র স্টিভ প্রিচার্ডও বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, ‘‘অর্ধেক ডোজের বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না। তবে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম ডোজের সমস্যা হয়েছে।’’ প্রিচার্ডের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভুল হয়েছে, তা কি স্বীকার করেছিল অক্সফোর্ড? জবাবে তিনি জানান, ভুল স্বীকার করা হয়নি।

ব্রিটেনের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে মিলিত ভাবে টিকা তৈরি করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এই মুহূর্তে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার উপরই ভরসা করে বসে আছে বিশ্বের একাধিক দেশ। সেই টিকা পরীক্ষার নেপথ্যে যে এ ধরনের ঘটনা রয়েছে, তা প্রকাশ্যে এল। যদিও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তরফে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement