—প্রতীকী চিত্র।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই এত দিন তাদেরই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করছিল গোটা বিশ্ব। সেই ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রোজেনেকার তৈরি করোনা প্রতিষেকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হল। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, চূড়ান্ত অর্থাৎ তৃতীয় পর্যায়ে যাঁদের উপর এই পরীক্ষা চলছিল, প্রতিষেধকের ডোজ নেওয়ার পর তাঁদের মধ্যে এক স্বেচ্ছাসেবক অজ্ঞাত অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তাই মানব শরীরে ওই প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাস্ট্রোজেনেকা।
ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের সঙ্গে হাত মিলিয়ে করোনার প্রতিষেধক তৈরি করছে ব্রিটিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রোজেনেকা। এ বছরের শেষে, না হলে আগামী বছরের গোড়ার দিকে তাদের তৈরি প্রতিষেধক ভারতের বাজারে এসে পৌঁছনোর কথা ছিল।
সংস্থার তরফে বিবৃতি জারি করে তাদের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘বিশ্ব জুড়ে নিয়ন্ত্রিত ভাবে এবং র্যান্ডোমাইজড পদ্ধতিতে অক্সফোর্ড করোনাভাইরাস প্রতিষেধকের যে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছিল, তা পর্যালোচনা করে দেখে স্বেচ্ছায় সাময়িক বিরতি নিয়েছি আমরা। একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিটির হাতে সমস্ত তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখতে পারে।’’
আরও পড়ুন: পাহাড় চুড়ো খুইয়ে যুদ্ধের হুমকি চিনের, ফের গুলি নিয়ন্ত্রণরেখায়
তিনি আরও বলেন, ‘‘মানবশরীরে প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলাকালীন যদি কেউ অজ্ঞাত কোনও অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, সে ক্ষেত্রে সাধারণত এমন পদক্ষেপই করা হয়। সততার সঙ্গে পরীক্ষা এগিয়ে নিয়ে যেতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।’’
কোনও প্রতিষেধক নিয়ে ব্যাপক আকারে পরীক্ষা করতে গেলে এই ধরনের ঘটনা একেবারেই অনভিপ্রেত নয় বলে আগেই জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে নিরপেক্ষ কমিটির হাতেই এর তদন্ত হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করে অ্যাস্ট্রোজেনেকার ওই মুখপাত্র। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত এই একটিমাত্র ঘটনাই ঘটেছে। যত শীঘ্র সম্ভব বিষয়টি খতিয়ে দেখে সমাধানে আসার চেষ্টা করছি আমরা, যাতে পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময়সীমার উপর তেমন প্রভাব না পড়ে।’’
তাদের তৈরি প্রতিষেধক নিয়ে যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাঁর নাম-পরিচয় যদিও প্রকাশ করেনি অ্যাস্ট্রোজেনেকা। যে ‘অজ্ঞাত অসুখ’ দেখা দিয়েছে তাঁর শরীরে, তা কতটা গুরুতর, খোলসা করা হয়নি তা-ও। প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে এমন ঘটনাও এই প্রথম নয়। তবে কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরিতে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল।
আরও পড়ুন: সুশান্তকে মাদক জোগানের অভিযোগ, ১০ বছর জেল হতে পারে রিয়ার!
করোনার প্রতিষেধক তৈরিতে এই মুহূর্তে বিশ্বের যে ৯টি সংস্থা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে অ্যাস্ট্রোজেনেকা অন্যতম। গত ৩১ অগস্ট থেকে আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপর প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করে তারা। তাদের তৈরি করোনার সম্ভাব্য প্রতিষেধকটির নাম এজেডডি১২২২। এটি একটি ‘অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন’। অ্যাডিনোভাইরাস একটি সাধারণ সর্দি-জ্বরের ভাইরাস যা শিম্পাঞ্জিদের থেকে তৈরি। ভাইরাসটিকে ভেক্টর বা বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
ভেক্টর ভ্যাকসিন হল এমন এক ধরনের প্রতিষেধক, যাতে ক্ষতিকর ভাইরাসটির (সার্স-কোভ-২ বা নোভেল করোনাভাইরাস) নিউক্লিক অ্যাসিড একটি বাহক মাইক্রোব (অন্য কোনও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া)-এর সাহায্যে মানুষের দেহে প্রবেশ করানো হয়। বাহক মাইক্রোবটি ভাল, তারা কোনও ক্ষতি করে না। দেহে ঢুকে তারা খারাপ ভাইরাসটির নিউক্লিক অ্যাসিডের সাহায্যে কিছু প্রয়োজনীয় প্রোটিন (এ ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিন) তৈরি করে ফেলে। প্রোটিনগুলোকে দেখে আমাদের শরীর মনে করে ক্ষতিকর ভাইরাসটি হামলা করেছে। সে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে। রোগ হওয়ার আগেই আমাদের দেহে সে রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়।