রোজকার কোলাহল উধাও। রাস্তায় বেরোলে ট্যাক্সির হর্নও সে ভাবে আর কানে আসে না। ছবিটি বরং একেবারে উল্টেই গিয়েছে। রাস্তার এক পাশে সার দিয়ে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে শীতল হয়ে গিয়েছে তাদের ইঞ্জিন।
তাইল্যান্ডের এই ছবি একেবারেই অচেনা। পর্যটন-নির্ভর তাইল্যান্ডের রাস্তায় এক সময় ট্যাক্সির রেষারেষি হত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের ট্যাক্সিতে চাপিয়ে সারা জায়গা ঘুরে দেখাতেন চালকেরা। অতিমারির প্রকোপে সে সব আজও বন্ধ। কেউ উপার্জনের বিকল্প সন্ধানে অন্য রাস্তায় হাঁটা দিয়েছেন, তো কেউ একেবারেই বেরোজগার হয়ে এই পরিস্থিতি কাটার অপেক্ষা করছেন।
এমতাবস্থায় বেকার পড়ে থাকা ট্যাক্সিগুলিকে অভিনব উপায়ে কাজে লাগিয়ে কাজ হারানো চালকদের উপার্জনের রাস্তা বাতলে দিল একটি সংস্থা।
তাইল্যান্ডের রাতচাফ্রুয়েক ট্যাক্সি কোঅপরেটিভ বসে থাকা গাড়িগুলির চালে ও চারপাশে আস্ত সব্জি বাগানই বানিয়ে ফেলেছে। সেখানে সব্জি ফলিয়ে যেমন দু’বেলা কাজ হারানো চালকদের পেট ভরাতে সাহায্য করছে তেমন সব্জি বেচে উপার্জনের পথও বার করে দিয়েছে এই সংস্থা।
ট্যাক্সির ছাদে এবং সামনে-পিছনে বাঁশের কাঠামো করে প্রথমে তার উপর কালো রঙের প্লাস্টিক বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পর মাটি এবং উপযুক্ত পরিমাণ সার মিশিয়ে সব্জি ফলানোর উপযোগী উর্বর মাটি তৈরি করে নিয়েছে। এই মাটিতেই লঙ্কা, শশা-সহ একাধিক সব্জির বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিদিন তাতে জল দিয়ে গাছের দেখাশোনা করেন ওই সংস্থার কর্মীরা। ক্রমে সেই বীজ থেকে গাছ বেরিয়ে তাতে নানা সব্জি ফলেছে। সেই সমস্ত সব্জি ওই সমস্ত ট্যাক্সির চালকদেরই দেয় সংস্থাটি।
এর পর বেঁচে থাকা সব্জি বিক্রি করেন তাঁরা। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিন পর্যটন শিল্প ধুঁকতে থাকায় বহু ট্যাক্সির ঋণও শোধ করা যায়নি।
এ ভাবে সব্জি বিক্রির টাকায় কিছুটা হলেও সেই ঋণ পরিশোধ করা যাবে বলেই মনে করছে সংস্থাটি। ট্যাক্সিগুলিকে কাজে লাগানোর এটাই তাঁদের শেষ উপায়, মনে করেন থাপাকর্ন আসাওয়ালের্টকুন নামে সংস্থার এক আধিকারিক।
চারপাশ মাটি দিয়ে ঘিরে ফেলে তাতে গাছ লাগালে ট্যাক্সির কোনও ক্ষতি কি হবে না? থাপাকর্ন জানালেন, এমনিতেও দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকার জন্য ট্যাক্সিগুলির অনেক অংশই ক্ষতিগ্রস্ত। কোনও কোনও ট্যাক্সির ইঞ্জিন খারাপ হয়ে গিয়েছে। কারও কোনও অংশ খুলে চলে আসছে। তাই নতুন করে আর কোনও ক্ষতির কথা তাঁরা ভাবছেন না।
সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাক্সির মাথা আজ সবুজে ভরে গিয়েছে। ফের কবে রাস্তায় ছুটবে জানা নেই, সব্জি বিক্রির টাকা কতটাই বা ঋণ পরিশোধ এবং চালকদের পেট ভরাতে কাজে লাগবে সে হিসাব কষার আগে এ কথা স্বীকার করতেই হয়, রাতচাফ্রুয়েক ট্যাক্সি কোঅপরেটিভ-এর এই উদ্যোগ অভিনব।