Coronavirus

সময়ে সতর্ক হয়েই এগিয়ে ভিয়েতনাম

কলকাতার বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরার পরে দেখেছি, মার্চের গোড়া থেকেই হ্যানয় ও সাইগনের মতো বড় শহরে সমস্ত মুভি কমপ্লেক্স, গেমস পার্লার, কারাওকে, স্পোর্টস সেন্টার, বিলিয়ার্ডস ক্লাব ও জিম বন্ধ করে রেখেছে।

Advertisement

সৌত্রিক দে

কুই নোহ্‌ (ভিয়েতনাম) শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৫৯
Share:

ভারতে ও অন্যান্য দেশে রোগটা ছড়িয়েছে বিদেশ থেকে। ভিয়েতনামে প্রথম সংক্রমণের খবর মিলেছিল গত ২২ জানুয়ারি। তার আগে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা শুধু নয়, সময়ে সব রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বলেই এ দেশে এখনও ত্রাস হয়ে উঠতে পারেনি কোভিড-১৯।

Advertisement

কলকাতার বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরার পরে দেখেছি, মার্চের গোড়া থেকেই হ্যানয় ও সাইগনের মতো বড় শহরে সমস্ত মুভি কমপ্লেক্স, গেমস পার্লার, কারাওকে, স্পোর্টস সেন্টার, বিলিয়ার্ডস ক্লাব ও জিম বন্ধ করে রেখেছে। স্কুল-কলেজও বন্ধ।

আন্তঃরাজ্য সীমানাও জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় মার্চের প্রথম থেকেই। ছাড় দেওয়া হয় শুধু চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত মানুষ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকারী যানবাহনকে। অনেক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ, সেখানে বহু কর্মীকে অল্প জায়গায় কাজ করতে হয়। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সেখানে দুস্কর।

Advertisement

বড় শহরগুলির অনুকরণে ছোট শহরগুলিও একই ভাবে নিজেদের সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখছে। হো-চি-মিন ও হ্যানয়ের মতো বড় শহরে সব রেস্তরাঁ বন্ধ। তবে ‘হোম ডেলিভারি’ চলছে। ফলে খাওয়াদাওয়ার কোনও অসুবিধা নেই। ছোট শহরেও সুপার মার্কেট এবং দুধ, আনাজ, ওষুধ— এ সবের দোকান খোলাই আছে। মাস্ক পরে না গেলে অবশ্য সেখানে ঢোকার অনুমতি মিলবে না। কিছু বড় বড় দোকানে দেহের তাপমান মেপে দেখা হচ্ছে। তাপমান স্বাভাবিক থাকলে তবেই মিলছে বাজার-দোকান করার অনুমতি। দেহের তাপমান বৃদ্ধি ধরা পড়লেই তাঁকে কোয়রান্টিনে পাঠিয়ে, শুরু করে দেওয়া হচ্ছে পরীক্ষা। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক উড়ান ২২ মার্চের পর থেকে বন্ধ। তার পরে আর বাইরের দেশ থেকে কেউই ঢুকতে পারেননি ভিয়েতনামে। আর মার্চের একদম প্রথম দিকে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় কোয়রান্টিনে।

ভিয়েতনামে কর্মসূত্রে থাকেন বহু চিনা। খবরে দেখছি, বিশ্বের কিছু দেশে তাঁদের বিরূপ আচরণের মুখে পড়তে হচ্ছে। এ দেশে তেমনটা নয়। শুধু চিন নয়, পৃথিবীর বহু দেশ থেকে মানুষ আসেন ভিয়েতনামে। কখনও কাজে, কখনও বেড়াতে। প্রথম প্রথম বিদেশিদের অবজ্ঞাসূচক দৃষ্টিতে দেখার একটা প্রবণতা তৈরি হচ্ছিল। এক তো ভাষাজনিত অসুবিধা, যা বরাবরই ছিল। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল নভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। এই কারণে এখানকার সরকার এক কড়া আইনি ব্যবস্থা নেয়। যাতে কোনও রেস্তরাঁ বা অন্য পরিষেবায় বিদেশিদের কোনও বিরূপ ব্যবহারের সম্মুখীন হতে না হয়।

সংক্রমণের কথা জানার পরে এই সব সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিয়েছে বিভিন্ন দেশ। সেই সুযোগে করোনা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বিশ্বে। আর সময়ে সতর্ক হওয়াতেই এ দেশে মোটের উপর স্বাভাবিক রয়েছে জনজীবন। ৯ কোটি ৭১ লক্ষের দেশটিতে আজ পর্যন্ত সংক্রমিতের সংখ্যা ২০৭। প্রতি ১০ লক্ষে ২ জন। তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও, এখনও মারা যাননি এক জনও। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৩ জনের সংক্রমণের কথা জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে সেরেও উঠেছেন ৫৭ জন।

তবে করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে থাকলেও বিশ্ব জুড়ে মন্দার ধাক্কা কী ভাবে সামলানো যাবে, সে চিন্তা থাকছেই। সরকার নিজে থেকে কল-কারখানা বন্ধ করেনি। কিন্তু বেশির ভাগই নিজে থেকে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এপ্রিল থেকে। কারণ চিন থেকে কাঁচামাল আসা যেমন বন্ধ, তেমনই আমেরিকা ও ইউরোপের বাজার থেকে অর্ডার আসাও বন্ধ। অন্য সব দেশের মতো তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র ও বেসরকারি সংস্থাগুলি ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ শুরু করেছে। কিন্তু সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে কাজ এত দিন চলেছে পুরোদমে। শারীরিক উপস্থিতির প্রয়োজন হয় না এমন সব সরকারি সংস্থাও ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ শুরু করবে কাল থেকে। বন্ধ থাকা কিছু বেসরকারি সংস্থা আপাতত অর্ধেক বেতন দিচ্ছে কর্মীদের। ফলে অর্থনীতির ধাক্কাটাই বড় চিন্তা এখন।

(লেখক একটি বহুজাতিক সংস্থার প্ল্যানিংম্যানেজার)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement