প্রতীকী ছবি।
এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমণে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। তবে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা গেলেও দেশবাসীর জন্য কখনওই তা বাধ্যতামূলক করা হবে না বলে বুধবার জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের করোনা টাস্ক ফোর্সের শীর্ষকর্তা অ্যান্টনি ফাউচি।
বাজারে ভ্যাকসিন আসার আগেই দেশবাসীর জন্য তা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করে সম্প্রতি জোর বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। চাপের মুখে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য সেই বয়ান ফিরিয়ে নেন তিনি। মরিসন বলেন, ‘‘আমি সকলকে টিকা নিতে উৎসাহ দিতে চেয়েছিলাম মাত্র।’’ বুধবার আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল আলোচনায় ফাউচিকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন নিতে কাউকে জোর করা যাবে না। আমরা কখনও তা করিনি।’’ তবে তাঁর মতে, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো প্রথম সারির করোনা-যোদ্ধাদের জন্য তা বাধ্যতামূলক হতে পারে। স্কুলে সংক্রমণ রুখতে বাচ্চাদের জন্যে টিকা বাধ্যতামূলক করতে পারে স্থানীয় প্রশাসন। তবে সে ক্ষেত্রেও কোনও বিশেষ শারীরিক অসুস্থতা থাকলে ছাড় মিলবে।
টিকা বাধ্যতামূলক না-হলেও, তা বাজারে আসামাত্র বিনামূল্যে বিতরণের কথা ভাবছে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার। প্রতিষেধকের বিপুল ডোজ় কেনার জন্য অন্তত ছ’টি গবেষণারত সংস্থাকে আগাম অর্ডার দিয়েছে তারা। আজ সেই পথে হেঁটেই দেশবাসীকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মরিসনও। পাশাপাশি, নির্ভরযোগ্য ভ্যাকসিনের জন্য তাঁরা যে অক্সফোর্ড এবং ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার দিকেই তাকিয়ে, সে-কথাও জানিয়ে দিয়েছে মরিসনের সরকার।
আমেরিকায় করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের জন্য বুধবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একহাত নিয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এই পরিস্থিতিতে জোর করে স্কুল-কলেজ খুলে দিলে, আন্দোলনের পথে নামবেন বলে হুমকি দিয়েছেন মিশিগান, নিউ ইয়র্ক-সহ বিভিন্ন প্রদেশের শিক্ষক সংগঠনগুলি।
অন্য দিকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই রাশিয়া ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করলেও, তার নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও তাতে হেলদোল নেই রাশিয়ার। ভারত-সহ অন্তত ২০টি দেশ তাদের টিকা নিতে রাজি বলে জানিয়েছে তারা। টিকা উৎপাদনের কাজ যে জোর কদমেই চলছে তা বোঝাতে সম্প্রতি ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তাতে পিপিই পরা কর্মীদের ভ্যাকসিন তৈরির কাজে দেখা গিয়েছে।
এ দিকে প্যাকেটজাত খাবার থেকেও করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে নতুন তথ্য সামনে এনেছে চিন। রাজধানী বেজিং এবং বন্দর শহর দালিয়ানে একাধিক ঘটনায় হিমায়িত এবং প্যাকেটজাত খাবারের মোড়কে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে বলে জানিয়েছে তারা। এর প্রেক্ষিতে করোনা-হটস্পট দেশগুলি থেকে প্যাকেটজাত খাবার আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চিনের একটি শহর। ফলে আন্তর্জাতিক রফতানির বাজারে নতুন করে আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছে। যদিও চিনের চিকিৎসক মহলের একাংশের মতে, খাবারের প্যাকেটের গায়ে ভাইরাসের অস্তিত্ব মিললেও তা থেকে সংক্রমণের বিষয়টি প্রমাণিত নয়। সে ক্ষেত্রে ভাইরাসটিকেও হিমায়িত অবস্থা থেকে স্বাভাবিক তাপামাত্রায় এসে সংক্রমণ ছড়াতে হবে। তবে তা একেবারে যে অসম্ভব, সে কথাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।