Coronavirus

লড়াইয়ের শেষ না-দেখে ময়দান ছাড়ব না

১০ মার্চও কুর্তা-পাজামা পরে ‘হ্যাপি হোলি’ লিখে ফেসবুকে ছবি আপলোড করেছি। আর এক মাস পরে বসে আছি এক মৃত্যুপুরীতে।

Advertisement

আকাশদীপ বিশ্বাস

পিসা (ইটালি) শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২০ ০৬:১৭
Share:

ছবি এএফপি।

ভোর ৫টা। অন্ধকারের মধ্যেই শুনতে পেলাম নীচে পুলিশের গাড়ি। অ্যাম্বুল্যান্সও। বুঝলাম আবারও কেউ...। বারান্দায় গিয়ে দেখি এক ব্যক্তি খুব কাশছেন। শ্বাস নিতে ভয়ঙ্কর কষ্ট। অতি সাবধানে তাঁকে তোলা হল অ্যাম্বুল্যান্সে। তত ক্ষণে ঘুম ভেঙে উঠে এসেছে পাড়ার সবাই। সকলে মিলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছেন আর বলছেন, ‘ইন বোক্কা আল লুপো’ অর্থাৎ গুড লাক। সকলের শুভেচ্ছা— যুদ্ধে যাচ্ছেন। জয়ী হয়ে, সুস্থ হয়ে ফিরুন।

Advertisement

১০ মার্চও কুর্তা-পাজামা পরে ‘হ্যাপি হোলি’ লিখে ফেসবুকে ছবি আপলোড করেছি। আর এক মাস পরে বসে আছি এক মৃত্যুপুরীতে। কথায় বলে, ‘ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন’। ঠিক সেই ঘটনাই সকলের জীবনে ঘটে গেল। হলিউডের সায়েন্স ফিকশনের থেকেও মারাত্মক।

আশপাশে শ্মশানের স্তব্ধতা। এত সুন্দর শহর। সব সময়ে বিদেশি পর্যটকে গমগম করে। এখন সব থমকে। চলন্ত গাড়ি যেন অবাক ঘটনা। কারণ সকলেই জানেন, অকারণে বেরোনো মানে মৃত্যুর সঙ্গে হাত মেলানো।

Advertisement

আমি ২০১৬ সালে ইটালির পিসায় ‘স্কুওলা নোরমালে সুপেরিওর’ বা এসএনএস বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজে যোগ দিই। কাজের বিষয় ‘ড্রাগ ডেভেলপমেন্ট’। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে আমি এবং কয়েক জন বিজ্ঞানী কোভিড-১৯ নিয়েই গবেষণা করছি। আমার কাজ করোনাভাইরাসের মেন প্রোটিয়াস নিয়ে।

আরও পড়ুন: অভিবাসী নিয়ে কি মনোভাব পাল্টাচ্ছে

করোনার হানা কিন্তু এই প্রথম নয়। ২০০২ সালেও চিনে গুয়াংডং থেকে সার্স করোনা জীবাণু বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশে ছড়ায়। সংক্রমিত হন প্রায় আট হাজার। মারা যান সাতশোর বেশি। কিন্তু পরে এই জীবাণুর ফিরে আসেনি। তাই ওষুধ সংস্থাগুলিও করোনা গবেষণা ও ওষুধ তৈরি করা বন্ধ করে দেয়। গবেষণা করতে গিয়ে দেখছি আগের থেকে এ বারের করোনা জীবাণুর প্রোটিয়াস নিজেকে ১২টি স্থানে মিউটেশন বা বদল করে ফেলেছে। তাই এ বার তার মারণক্ষমতা এত বেশি।

আরও পড়ুন: গোড়ায় ঢিলেমির মাসুল নিউ ইয়র্কে

আমার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। হয়ে গিয়েছি বিজ্ঞানী। বাড়ির সকলে খুব চিন্তায় আছে জানি। শেষ বার ২০১৮ সালে বাড়ি ফিরেছিলাম। কিন্তু বলে দিয়েছি, যে লড়াইয়ে নেমেছি, তার শেষ দেখে ছাড়ব। ময়দান ছেড়ে পালাব না। বিজ্ঞানী হয়েও ভগবানে বিশ্বাস করি। আশা করি তিনি দ্রুত আমাদের সাফল্য দেবেন। মানুষকে বাঁচাতে পারব। নিজেকেই নিজে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলছি— ‘ইন বোক্কা আল লুপো’।

(লেখক গবেষক)

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement