ছবি: এএফপি।
গত ৯ মাসে ৯ লক্ষ ৯৪ হাজার ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। ১০ লক্ষ ছুঁতে হয়তো আর দু’দিন! এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) শুক্রবার দাবি করল, করোনা রুখতে সব দেশ জোটবদ্ধ হয়ে কাজ না-করলে এই মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়া কিছু অসম্ভব নয়!
অর্থাৎ কিনা ২০ লক্ষ! এ প্রসঙ্গে হু-র স্বাস্থ্য জরুরি পরিষেবার এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর মাইক রায়ান বলেন, ‘‘ন’মাসে ১০ লক্ষের কাছাকাছি মৃত্যু। ভ্যাকসিন আসতে হয়তো আরও ন’মাস। ভেবে দেখলে বিষয়টা সত্যিই অকল্পনীয়, কিন্তু অসম্ভব নয়।’’ রায়ানের কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতে ঘুরেফিরে একটাই প্রশ্ন উঠছে, আরও কঠিন সময় হয়তো আসতে চলেছে। সেটা আটকানোর জন্য আমরা কি তার জন্য প্রস্তুত?’’
জেনিভার সাংবাদিক বৈঠকে হু-র এই কর্মকর্তা জানান, তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে মৃত্যুহার ধীরে ধীরে কিছুটা কমেছে। তার একটা বড় কারণ, কোভিড-আক্রান্তদের মধ্যে যাঁদের অবস্থা গুরুতর, তাঁদের বাঁচানোর জন্য জান লড়িয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞেরা। অক্সিজেন দেওয়া, স্টেরয়েড প্রয়োগ, যা যা করা যায়। কিন্তু ভ্যাকসিন না-আসা পর্যন্ত এবং পৃথিবীর সর্বত্র তা সহজলভ্য হওয়া ইস্তক, রেহাই নেই বলেই অনুমান রায়ানের। ততদিনে মৃতের সংখ্যা ২০ লক্ষ ছুঁয়ে ফেলা অসম্ভব নয়। তা হলে উপায় কী?
বিশ্বে করোনা
মৃত ৯,৯৬,৫৬৫
আক্রান্ত ৩,২৯,৭৯,৬১২
সুস্থ ২,৪৩,৩৫,১২৩
রায়ানের দাওয়াই— ‘‘এখনই কিছু জরুরি পদক্ষেপ করতে হবে। শুধু পরীক্ষা করানো নয়, শুধু করোনা-রোগীকে চিহ্নিত করা নয়, শুধু চিকিৎসা নয়, শুধু পারস্পরিক দূরত্ব বজায় নয়, শুধু সাফসুতরো থাকা নয়, শুধু মাস্ক নয়, শুধু ভ্যাকসিন নয়... এই সবগুলো একসঙ্গে বজায় রাখতে হবে। এই সবটা মেনে না-চললে, ২০ লক্ষ মৃত্যু শুধু সম্ভব নয়, এটা হয়তো অবশ্যম্ভাবী। ’’
আরও পড়ুন: ২০২১-এ কোভিড-টিকার ১০০ কোটিরও বেশি ডোজ, লক্ষ্য চিনের
ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে তা যেন ধনী-গরিব নির্বিশেষে বিশ্বের সব প্রান্তে সকলের কাছে পৌঁছয়, সেই বিষয়েও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে হু। প্রকল্পটির নাম ‘কোভ্যাক্স’। এতে যোগ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই ১৫৯টি দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। সংখ্যাটা আরও বেড়ে ১৭০ ছাড়াতে পারে বলে আশাবাদী হু। আমেরিকা গোড়াতেই জানিয়ে দিয়েছিল, তারা ‘কোভ্যাক্স’-এ যোগ দেবে না। চিনও রাজি নয়।
তবে হু এখনও চিনের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাচ্ছে।
আজ মার্কিন ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থা জনসন অ্যান্ড জনসন দাবি করল, তাদের তৈরি সম্ভাব্য প্রতিষেধকের একটি ডোজ়ই করোনা রুখতে কার্যকরী। এই সংস্থার তরফে ৬০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। মার্কিন সংস্থা মডার্নার ভ্যাকসিন নিয়েও আশাবাদী সকলে। লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজ তাদের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের ‘হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল’ শুরু করতে চলেছে। করোনা-অতিমারিতে এই প্রথম এমন ট্রায়াল। এই পরীক্ষায় সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকদের ইচ্ছাকৃত ভাবে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত করা হবে। তার পরে পরীক্ষাধীন ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দেখা হবে তা কতটা কার্যকর। এই ট্রায়ালে যোগ দেওয়ার জন্য ব্রিটেনের ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সই করেছেন। গোটা প্রক্রিয়া শুরু করতে ২০২১-এর জানুয়ারি।
ব্রিটেনে ‘হিউম্যান চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল’-এর অনেক পুরনো ইতিহাস রয়েছে। ১৭৯৬ সালে বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার যখন স্মল পক্সের টিকা আবিষ্কার করেন, তখন তিনি এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। জেমস ফিপস নামে ৮ বছর বয়সি এক বালকের শরীরে কাউপক্স সংক্রমণ ঘটানো হয়। তার পরে তাকে পরীক্ষাধীন ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল। নিজেদের গবেষণায় জেনারের পথই বেছে নিয়েছে ইম্পিরিয়াল কলেজ।