জোহানেসবার্গের হাসপাতালে করোনা রোগীকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ছবি-এএফপি।
করোনা সংক্রমণে তীব্র শ্বাসকষ্ট থেকে রোগীকে কিছুটা বাঁচিয়ে রাখতে যখন ভেন্টিলেটর ছাড়া গতি নেই, তখন জানেন কি, একটিও ভেন্টিলেটর নেই সোমালিয়ায়? শুধুই সোমালিয়া নয়, আফ্রিকার আরও ৯টি দেশে নেই কোনও ভেন্টিলেটর!
গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর অবস্থা একটু ভাল! ২০ লক্ষ মানুষ পিছু ভেন্টিলেটর রয়েছে মাত্র একটি করে। গোটা দেশে সাকুল্যে ৫টি। মালি আর ৫০ লক্ষ মানুষের সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, এই দু’টি দেশে ভেন্টিলেটর রয়েছে তিনটি করে। ১ কোটি ১০ লক্ষ নাগরিকের দেশ দক্ষিণ সুদানে মেরেকেটে ৪টি! যে সুদানে ভাইস প্রেসিডেন্টই রয়েছেন ৫ জন!
কোনও গল্পকথা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য, পরিসংখ্যানই এ কথা জানিয়েছে। জানিয়েছে, গোটা আফ্রিকা মহাদেশের ৪১টি দেশে কয়েক কোটি নাগরিকের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলিতে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ২ হাজারেরও কম। যেখানে আমেরিকায় ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ১ লক্ষ ৭০ হাজার। ১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতেও সরকারি হাসপাতালগুলিতে ভেন্টিলেটর অপর্যাপ্তই। মাত্র ৪২ হাজারটি!
ভেন্টিলেটর তো পরের কথা। করোনা সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে বার বার সাবান ও জল দিয়ে দু’টি হাত ধুয়ে নেওয়ার কথা বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (‘হু’)। অথচ, রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০১৫ সালের রিপোর্ট জানাচ্ছে, সহারা মরুভূমি সন্নিহিত আফ্রিকার মাত্র ১৫ শতাংশ দেশে মোটামুটি ভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে মেলে বিশুদ্ধ জল আর সাবান। বাকি ৮৫ শতাংশ দেশে তা মেলেই না।
আরও করুণ অবস্থা লাইবেরিয়ার। রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০১৭ সালের রিপোর্ট বলছে, লাইবেরিয়ায় ৯৭ শতাংশ বাড়িতেই বিশুদ্ধ জল আর সাবান পাওয়া যায় না।
ঢাল নেই তবু...! গোষ্ঠী সংক্রমণ রোখার মরিয়া চেষ্টা শুরু হয়েছে আফ্রিকায়। ছবি-এএফপি।
অথচ, বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের মতোই আফ্রিকার দেশগুলিতে রোজ প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। শুক্রবার হু-এর পরিসংখ্যান জানিয়েছে প্রতি ৬ দিনে গিনিয়াতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। ঘানায় তা দ্বিগুণ হচ্ছে প্রতি ৯ দিনে। দক্ষিণ আফ্রিকায় গত ৬ দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ২ হাজার ৬০০। আর ক্যামেরুনে ১ হাজার।
আরও পড়ুন: ‘হটস্পট’ জেলার মধ্যে ‘কনটেনমেন্ট’ এলাকা সিল করে দিচ্ছে রাজ্য
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্তের মৃত্যু, এসএসকেএমে ৮ চিকিৎসক-সহ ১৪ জন কোয়রান্টিনে
তবে আফ্রিকা মহাদেশের ৫৫টি দেশেই যে ভেন্টিলেটরের অভাব রয়েছে, তা বলা যাবে না। এ ক্ষেত্রে বেশ বৈষম্য রয়েছে। এক দিকে যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার মতো আর্থিক দিক থেকে উন্নত দেশে ভেন্টিলেটরের অভাব দেখা যায় না। অন্য দিকে দেখা যায়, বুরকিনা ফাসোর মতো ২ কোটি জনসংখ্যাবিশিষ্ট দেশে ভেন্টিলেটর রয়েছে মাত্র ১১টি। অথচ, পশ্চিম আফ্রিকায় ওই দেশে করোনাভাইরাস হানা দিয়েছিল বহু আগেই।
শুধু তাই নয়, করোনা রোগীকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখার প্রয়োজন হয়। অথচ, হু-র দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, আফ্রিকার ৫৫টি দেশের মধ্যে ৪৩টিতে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে শয্যার সংখ্যা মাত্র ৫ হাজার। যার অর্থ, আফ্রিকার ওই দেশগুলিতে প্রতি ১০ লক্ষ নাগরিকের জন্য ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে শয্যা রয়েছে সাকুল্যে ৫টি করে! যেখানে গোটা ইউরোপের সবক’টি দেশেই প্রতি ১০ লক্ষ মানুষের জন্য ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে শয্যার সংখ্যা ৪ হাজার!
হু জানাচ্ছে, আফ্রিকার দেশগুলিতে একেবারেই অপ্রতুল অক্সিজেন মাস্কও। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয় মাত্র ৩ শতাংশের। কিন্তু করোনা রোগীদের অবস্থা অবনতির দিকে এগলে প্রত্যেকেরই লাগে অক্সিজেন মাস্ক। ইথিওপিয়ায় যেমন করোনা রোগীদের মধ্যে ২০ শতাংশের অবস্থার রীতিমতো অবনতি হয়েছে গত দু’দিনে। কিন্তু ইথিওপিয়ায় যা অক্সিজেন মাস্ক রয়েছে, তাতে সেই রোগীদের খুব সামান্য অংশের জন্যই অক্সিজেন মাস্কের ব্যবস্থা করা সম্ভব, জানাচ্ছে হু।
এখন বিদেশ থেকে ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন মাস্ক তড়িঘড়ি নিয়ে এসে যে কোনও ভাবে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে আফ্রিকার হা-অন্ন দেশগুলি। কিন্তু অর্থই যে সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে!
ফলে, দুর্গম আফ্রিকার মানুষের কাছে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটা ক্রমশই সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে!
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ২ কোটি নাগরিকের জন্য ১১টি লেখা হয়েছিল। যা আসলে বুরকিনা ফাসোর ভেন্টিলেটরের পরিসংখ্যান। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত।)