ছবি এএফপি
অর্থনীতির চাকা ঘোরাতেই লকডাউন শিথিল করার পক্ষে সওয়াল করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এ নিয়ে অযথা তাড়াহুড়ো করলেই বিপদ— সাফ জানিয়ে দিলেন ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফসি। ট্রাম্পের অবস্থান থেকে কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরেই গত কাল সেনেটের শুনানিতে তিনি বলেন, ‘‘তাড়াহুড়োর জেরে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে অর্থনীতি তো মুথ থুবড়ে পড়বেই, আরও বেশি মানুষের ভোগান্তি হবে। মৃত্যুও বাড়বে।’’
করোনা-আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে থাকতে পারেন, এই আশঙ্কায় ফসি নিজেই এখন নিভৃতবাসে। কাল সেনেটে ঘণ্টা তিনেকের শুনানিতে তাঁর সঙ্গেই ভিডিয়ো কনফারেন্সে ছিলেন করোনা টাস্ক ফোর্সের আরও দুই সদস্য। লকডাউন নেহাত শিথিল করতেই হলে, ফেডেরাল গাইডলাইন মেনে চলার কথাই বলেন তাঁরা।
বিশ্বে করোনা
মৃত
২,৯৬,০৯২
আক্রান্ত
৪৩,৯৯,০৭০
সুস্থ
১৬,৪৪,৩৯৮
করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর নিরিখে এই মুহূর্তে তালিকার শীর্ষে আমেরিকা। আক্রান্ত ১৪ লক্ষ ছাড়িয়েছে। মৃত প্রায় ৮৪ হাজার। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির একটি সমীক্ষা বলছে, অগস্টের শুরুতেই দেশে করোনা-মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ ছাড়াবে। ‘ওপেন আমেরিকা আগেন’-এ ট্রাম্প সত্যিই তাড়াহুড়ো করছেন কি না, প্রশ্ন উঠছে। কেউ বলছেন, আসন্ন ভোটের কথা মাথায় রেখেই প্রেসিডেন্ট এত বেপরোয়া।
আরও পড়ুন: কাবুলে মৃত বেড়ে ২৪, গনির হুঙ্কার
এর উল্টো দিকে ফসির আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ মিলছে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকেই। যেমন জার্মানি। গোড়ায় করোনা-মোকবিলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করা ইউরোপের এই দেশটি সবে লকডাউন শিথিল করতে শুরু করেছে। আর তাতেই সংক্রমণের গ্রাফ গত তিন দিনে ফের ঊর্ধ্বমুখী। মঙ্গলবারের রিপোর্ট বলছে, এক দিনে সে দেশে আক্রান্ত প্রায় ৮০০। মৃত ১০১। দেশের শুধু তিনটি কসাইখানা থেকেই ৩৩৬ জনের শরীরে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল আজই পার্লামেন্টে বলেন, ‘‘এই ভাইরাসকে নিয়েই চলতে হবে আমাদের। সতর্ক থাকতে হবে। আবার নিষেধাজ্ঞায় ফেরা মানে, অবসাদ বাড়বে।’’
পরিস্থিতি ভাল নয় রাশিয়ারও। গত ১০ দিনের মতো আজও সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজারেরও বেশি। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তবু অর্থনীতি সচল রাখতে লকডাউন তোলার পথেই হাঁটছেন। তবে বলছেন, ‘‘অনেক ভুগেছি। এ বার এগোতেই হবে।’’
চিনেও আজ ফের নতুন করে ১৫ জনের শরীরে সংক্রমণ মিলেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সোলে ফের গুচ্ছ সংক্রমণের ইঙ্গিত। হংকংয়ে নতুন করে ছড়াচ্ছে স্থানীয় স্তরে সংক্রমণ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও এখন লকডাউন তোলায় মেপে পা ফেলারই পক্ষপাতী। তাঁর কথায়, ‘‘সংক্রমণ কমাতে দেশ জান লড়িয়ে দিয়েছে। কোনও ভাবেই সংক্রমণের দ্বিতীয় ঝড় উঠতে দিতে পারি না।’’
করোনা-ত্রাসের এই আবহেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ন্ত্রক কমিটির এগ্জিকিউটিভ বোর্ডের চেয়ার হতে চলেছেন ভারতীয় প্রতিনিধি। সময়টা কঠিন। বিশেষত করোনা নিয়ে যে ভাবে চিন ও আমেরিকার তরজা চলছেই। তাই সম্মানের এই মুকুট যাতে ‘কাঁটার মুকুট’ না হয়ে দাঁড়ায়, লকডাউন শিথিল প্রক্রিয়ার পাশাপাশি এ নিয়েও ভাবতে হচ্ছে দিল্লিকে।
আরও পড়ুন: রোদ উঠতেই করোনা ‘মারতে’ রাস্তায় ফরাসিরা