‘ভাইরাস’ বিষের করাল গ্রাস মানবজাতি এর আগেও চাক্ষুস করেছে। কলেরা, গুটিবসন্ত, প্লেগ থেকে সার্স, ইবোলা থেকে আজকের কোভিড ১৯ বা করোনা।
আজকের করোনাকে প্রত্যাঘাত করার মতো অস্ত্র এখনও মানুষের হাতে নেই। তাই লকডাউনই এখন একমাত্র ভরসা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীবকুলের।
পশুপাখি তাই বহাল তবিয়তেই ঘুরে বেড়াচ্ছে আর মানুষ হয়ে পড়েছে ‘খাঁচাবন্দি’। ছবিটা পাল্টে গিয়েছে অনেকটাই।
লকডাউনের কারণে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমেছে, কমেছে হিমবাহের বরফ গলনও। অন্য দিকে বেড়েছে দৃশ্যমানতা। মানুষের শ্বাসযন্ত্রকে বিকল করার খেলায় নেমেছে করোনা আর অন্য দিকে সেই সুযোগে প্রকৃতি আবার যেন প্রাণ ভরে একটু শ্বাস নিতে পারছে।
ইটালি থেকে শুরু করে ভারত— বিশ্বের সব প্রান্তেই এখন এই অবস্থা। পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র ভেনিসের লেকের জল ফের স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ হয়ে গিয়েছে। সেই লেকে ফের দেখা মিলছে রাজহাঁস থেকে ডলফিনের।
কালো কুচকুচে যমুনার জলও নীল হয়ে ধরা দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন বেশ কিছু ছবিতে সিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকও।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফাঁকা রাস্তাঘাটে বিভিন্ন প্রাণী নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি এমনই এক সুন্দর অভিজ্ঞতার সাক্ষী হল দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগের ন্যাশনাল পার্ক।
পার্কে রুটিন টহল দিতে গিয়ে বিরল দৃশ্য দেখলেন পার্ক রেঞ্জার রিচার্ড সৌরি। দেখেন, সেখানে পার্কের ভিতরে রাস্তা জুড়ে আরামে ঘুমচ্ছে সিংহের দল। পর্যটকদের জেরে নাজেহাল সিংহদের এর আগে কখনও দিনের বেলায় এ ভাবে রাস্তার উপর নিশ্চিন্তের ঘুম দিতে দেখেননি তিনি।
করোনাভাইরাসের জেরে দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে গত ২৫ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। ক্রুগের ন্যাশনাল পার্কেও চলছে লকডাউন। কিন্তু পার্কের দেখভালের জন্য এবং বন্যপ্রাণীদের চোরাশিকারিদের হাত খেকে রক্ষা করার জন্য লকডাউনের মধ্যেও পার্ক রেঞ্জার রিচার্ড কর্তব্য পালন করে চলেছেন।
গত বুধবার তিনি টহল দিতে গাড়ি নিয়ে বার হন। তখনই পার্কের ভিতরে রাস্তার উপর এমন বিরল দৃশ্য দেখে থমকে যান। সিংহদের থেকে মাত্র পাঁচ মিটার দূরত্বে গাড়ি থামিয়ে মোবাইল ফোনে কতগুলো ছবি তুলে ফেলেন।
রিচার্ড জানান, সাধারণত মানুষদের গাড়িতে দেখতেই অভ্যস্ত বন্যপ্রাণীরা। সে কারণে এত কাছে গাড়ি নিয়ে গেলেও ভয়ের কিছু দেখছিল না তারা। নিশ্চিন্তে ঘুম দিচ্ছিল।
এর আগেও অনেক বার রাস্তার উপর সিংহের দলকে শুয়ে থাকতে দেখেছেন রিচার্ড। তবে সেটা সাধারণত শীতকালে এবং রাতে। কারণ রাস্তার পিচ অনেক রাত পর্যন্ত গরম থাকে, তাই শীতে সন্ধ্যা নামার পর সিংহের দল গা গরম করতে রাস্তায় এসে শুয়ে থাকে অনেক সময়ই।
আফ্রিকার মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে দক্ষিণ অফ্রিকাতেই। এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় অন্তত আড়াই হাজার সংক্রমণ মিলেছে। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের।