হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
বিশ্বের অন্যতম প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রাক্তনীদের তালিকায় রয়েছেন বেশ কিছু নোবেল-প্রাপক, মার্কিন প্রেসিডেন্ট, অলিম্পিয়ান, রয়েছেন পৃথিবী কাঁপানো বুদ্ধিজীবী, ধারণার শিকড় নাড়িয়ে দেওয়া তত্ত্ববিদ। এমন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেখার ইচ্ছে কার থাকে না! কিন্তু সকলের সেই সুযোগ মেলে না। কিন্তু সম্প্রতি আপনার হাতের কাছেই চলে এসেছে আমেরিকার প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। একগুচ্ছ অনলাইন কোর্স নিয়ে। ইচ্ছে করলেই পড়তে পারেন আপনিও। তাও এক্কেবারে নিখরচায়।
করোনা-পরিস্থিতি আর তার অনুষঙ্গে বিশ্বজোড়া লকডাউনে এখন হাঁসফাঁস করছে মানুষ। প্রায় সেই সময়েই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক ঝাঁক পাঠক্রমের উপহার নিয়ে এল। বিভিন্ন বিষয়ের ৬৪টি পাঠক্রম অনলাইনে পড়ার সুযোগ দিচ্ছে তারা। আর সব থেকে বড় কথা, এই পড়াশোনার জন্য যেমন কোনও খরচ লাগবে না, তেমনি লাগবে না কোনও ডিগ্রিগত যোগ্যতাও। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাড়িতে বসে যে কেউ পেতে পারেন এই সব পাঠক্রম। কেবল এই সংক্রান্ত সার্টিফিকেট পেতে গেলে খরচ করতে হবে সামান্য পরিমাণ অর্থ।
হার্ভার্ডের এই অনলাইন কোর্সগুলির মধ্যে রয়েছে আইটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বিজনেস, ডেটা সায়েন্স, হেলথ অ্যান্ড মেডিসিন এবং হিউম্যানিটিজ, কম্পিউটার সায়েন্স, সোশ্যাল সায়েন্স সংক্রান্ত বিবিধ বিষয়। পাঠক্রমগুলির দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ১৫ সপ্তাহের আশেপাশে। বলাই বাহুল্য, এই কোর্সগুলির রূপরেখা নির্ণয় করেছেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষকরাই।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনা মোকাবিলায় ভারতের সহযোগিতাকে কুর্নিশ জানাল রাষ্ট্রপুঞ্জ
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক পাঠক্রমগুলিতে টুডি এবং থ্রিডি গেম ডেভেলপমেন্ট থেকে বিভিন্ন ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ-এর প্রযুক্তি শেখার বন্দোবস্ত রয়েছে। রয়েছে সিএস৫০ বিষয়ে বিবিধ পাঠক্রম। বিজনেস বিভাগে ইমার্জিং ইকনমিকস, কন্ট্র্যাক্ট ল এবং অ্যাকাউন্টিং ও ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট বিষয়ে তিনটি প্রাথমিক কোর্স রয়েছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স ও মেশিন লার্নিং-এর এই যুগে ১৪টি অনলাইন পাঠক্রম হাজির করেছে হার্ভার্ড ডেটা সায়েন্স বিভাগে।
করোনাভাইরাস অতিমারির প্রেক্ষিতে ইবোলা বা অন্য মহামারিগুলি সংক্রান্ত পাঠক্রম পেশ করছে হার্ভার্ড তার হেলথ অ্যান্ড মেডিসিন বিভাগে। রয়েছে ম্যালেরিয়া দূরীকরণের পাঠক্রমও। স্নায়ুবিজ্ঞানের প্রাথমিক পাঠও পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে। বিজ্ঞান ও রান্নাবান্নার সম্পর্ক নিয়েও রয়েছে ৬ সপ্তাহের পাঠক্রম।
তবে সব থেকে আগ্রহব্যঞ্জক বিষয় বোধ হয় রয়েছে হিউম্যানিটিজ বিভাগে। পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতা ও ধর্মের উপরে রয়েছে এক ঝাঁক কোর্স। শাস্ত্র-ভিত্তিক হিন্দু ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্মের রূপরেখা, এমনকি শিখ ধর্মের উপরেও রয়েছে পাঠক্রম। এক একটির দৈর্ঘ ৪ সপ্তাহ। চিন ও কমিউনিজম এবং আধুনিক চিন-তাইওয়ান, হংকং সম্পর্কে বিশদ জানতে চাইলেও, তার বন্দোবস্ত করেছে ১৬৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশদে রয়েছে শেক্সপিয়র পাঠের আয়োজনও। এখানেই শেষ নয়, বিজ্ঞান ও যুক্তির চেনা জগৎ পেরিয়ে কেউ যদি হাঁটতে চান গুপ্তবিদ্যার জগতে, তাঁর জন্য রয়েছে দৈববাণী, ভবিষ্যদ্বচন ও গূঢ় সংকেতের ইতিবৃত্ত সংক্রান্ত পাঠক্রমও। এমনকি প্রাচীন মিশর, পিরামিড ও হায়ারোগ্লিফিক লিপি সংক্রান্ত পাঠক্রমও পেতে পারেন একেবারেই বিনিপয়সায়।
আরও পড়ুন: অতিমারি শেষ হলে আবার দেখা হবে আমাদের, তখন নতুন পৃথিবীর মুখ দেখব?
কোভিড-১৯ অতিমারি ও আবিশ্ব লকডাউন কি পৃথিবীর চেনা মুখচ্ছবি বদলাতে চলেছে? হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অনলাইন পাঠক্রমের দিকে তাকালে তেমন বোধ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আগামী বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি ও ডেটা সায়েন্সই হয়ে দাঁড়াতে পারে প্রধানতম বিজ্ঞান। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য ছাড়া মানুষ হয়তো এক কদমও এগোতে পারবে না। কোভিড-১৯ অতিমারি প্রচলিত চিকিৎসা-ভাবনাকে একেবারেই বদলে দিচ্ছে। এই সময়ে প্রয়োজন অন্যান্য মহামারিগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা। সেই সঙ্গে বদলে যাওয়া বিশ্বের অর্থনীতি ও বাণিজ্যকেও বুঝতে চাওয়াটা জরুরি এখন। করোনা-অতিমারি মানববিদ্যাচর্চার অভিমুখকেও বদলে দিচ্ছে। পৃথিবীতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার পরিবেশকে মনে রেখেই কি হার্ভার্ড পেশ করছে বেশ কিছু ধর্ম ও তাদের শাস্ত্র সংক্রান্ত পাঠক্রম? প্রাচীন সভ্যতার প্রযুক্তি সংক্রান্ত কোর্স কি দেখাবে আগামি পৃথিবীকে নতুন ভাবে গড়ার স্বপ্ন? নাকি অকাল্ট বিষয়ক পাঠক্রম থেকে উঠে আসবে ভুলে যাওয়া কোনও বিশেষ মূল্যবোধ? হার্ভার্ডের এই ৬৪টি পাঠক্রম থেকে এই প্রশ্নগুলি উঠে আসেই।
প্রাচীন ভারত কলাবিদ্যাকে ৬৪টি ধারায় ভাগ করেছিল। এই মুহূর্তে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও ৬৪টি অনলাইন পাঠক্রমকে নিখরচায় পেশ করছে। প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞানচর্চার ইতিহাস বলে, এই ৬৪টি কলা এক ‘সমগ্র’-কে জানায়। হার্ভার্ডও কি তেমনই কিছু ভেবেছে তার ৬৪টি বিদ্যার বিষয়ে? এই চর্চা হয়তো অতিমারি-উত্তীর্ণ বিশ্বকে নতুন করে বাঁচতে শেখাবে, নতুন করে ভাবতে শেখাবে। আপাতত লকডাউনের দিশাহীনতাকে উপেক্ষা করে ডুব দেওয়া যেতেই পারে এই সব পাঠক্রমের গভীরে।
এই মুহূর্তে অনলাইন পাঠক্রম পেশ করছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও বাণিজ্যিক সংস্থাও। লকডাউন বিশ্বে অনলাইন পড়াশোনাই হয়ে উঠছে বিদ্যার্জনের সব থেকে জনপ্রিয় উপায়। সেই তালিকায় সংযোজিত হল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও।