বিশ্বের প্রতিটা মানুষের কাছেই উহান এখন ভীষণই পরিচিত একটা নাম। সৌজন্যে অতিমারি কোভিড ১৯। যে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে এখন সারা বিশ্ব কাঁপছে, তার উত্পত্তিস্থল এই উহানই।
তবে নামের সঙ্গে পরিচিত হলেও উহানের সঙ্গে প্রকৃত পরিচয় অনেকেরই গড়ে ওঠেনি। চিনের এই উহান শহর সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য রইল গ্যালারিতে।
চিনের সবচেয়ে পুরনো শহর উহান। এবং সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহীও। চিনের বহু প্রাচীন সংস্কৃতির ছাপ এখনও এই শহরে রয়েছে। এমনকি চিনের সবচেয়ে পুরনো এবং জনপ্রিয় অপেরা হ্যানও এই শহরের।
চিনের বহু বছরের ইতিহাস বয়ে চলেছে এই শহর। হুবেই প্রভিনশনাল মিউজিয়াম, ইয়ালো ক্রেন টাওয়ার থেকে চিনের ইতিহাস সম্বন্ধে অনেক তথ্য জানা যায়।
মধ্য চিনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান। ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, মধ্য চিনের সবচেয়ে জনবসতিপূর্ণ শহর হল উহান। ২০১৫ সালে জনসংখ্যা ছিল এক কোটি ৬০ লক্ষ।
উহানের উচ্যাং, হাংকুয়ো এবং হ্যাংইয়াং এই তিন অঞ্চলেই ছড়িয়ে রয়েছে এই জনসংখ্যা।
শুধুমাত্র চিনের ইতিহাসের বড় সাক্ষী হয়েই দাঁড়িয়ে নেই, উহান মধ্য চিনের পরিবহণ এবং ব্যবসারও কেন্দ্রস্থল।
জলপথ, সড়কপথ, রেলপথ সমস্ত দিক থেকেই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এই শহরের। মধ্য চিনের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থানের জন্য উহানে ব্যবসাও খুব ফুলে ফেঁপে ওঠে।
কাঠ, চা, সিল্ক, তুলো-সহ নানা জিনিসের ব্যবসা এখানে। এ ছাড়া নানা রকম প্রাণীর কেনাবেচারও বড় কেন্দ্র উহান। এই নানারকম প্রাণীর মাংস থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কথা শোনা গিয়েছিল প্রথমে।
আর উহান থেকে দ্রুত কেন বিশ্বের অন্যান্য শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল? তার কারণও উহানের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ব্যবসায় সমৃদ্ধি।
আসলে ব্যবসার খাতিরেই দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীদের যাতায়াত এই উহানে। তাঁদের মধ্যে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরলেই, তাঁর থেকে ক্রমে ওই দেশের বাকিদেরও মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল এই ভাইরাস।
এই ভাবে উহান থেকে শুধু চিনেই নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এই সংক্রমণ অতিমারির আকার নিয়ে নিয়েছে।
শুধুমাত্র উহানেই ১৬৫৬টি বড় কারখানা রয়েছে। এ ছাড়াও আরও নানা ধরনের ছোট কারখানা তো রয়েছেই। এই উহানেই রয়েছে বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, ফার্মাকিউটিকলসের মতো উত্পাদন শিল্পও। এবং চিনের তৃতীয় বৃহত্ গাড়ি উত্পাদন কেন্দ্রও এই উহান।
উহানে সারা বছরই আর্দ্রতাপূর্ণ আবহাওয়া। গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
তবে জুলাই মাস নাগাদ তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। আর সবচেয়ে ঠান্ডা পড়ে জানুয়ারিতে। তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রির কাছাকাছি নেমে যায়। যদি কখনও উহানে বেড়াতে যেতে চান, তার জন্য মার্চ থেকে জুলাই আর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর হল উপযুক্ত সময়।