জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর খালেদা জিয়া।—ছবি রয়টার্স।
বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই এই সুপারিশ করা হয়েছে। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নির্বাহী আদেশে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার আবেদন করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদার পরিবার। তার পরেই, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান আইনমন্ত্রী। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাদেশ জুড়ে ১০ দিনের আংশিক লকডাউন যতদূর সম্ভব সর্বাত্মক করতে আজ থেকেই সেনা মোতায়েন করেছে সরকার। তার আগেই ২৫ মাস কারাবাসের পরে প্রধান বিরোধী দলের নেতাকে মুক্তি দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত।
আইনমন্ত্রী জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে ৬ মাসের জন্য তাঁকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গুলশনে তিনি নিজের বাড়িতে থাকবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না, এই শর্তেই খালেদাকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তবে এ দিন ঘোষণার পরেও আইনি প্রক্রিয়ার কাজ শেষ হয়নি। আগামিকাল বিকেল নাগাদ বিএনপি নেত্রী মুক্তি পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মহম্মদ শহীদুজ্জামান। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সূত্র জানায়, সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা করার বিষয়টি মৌখিকভাবে তাঁদেরও জানানো হয়েছে। খালেদার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দর জানিয়েছেন, মুক্তি পাওয়ার পরে জিয়া গুলশনে নিজের বাড়ি ‘ফিরোজা’তেই উঠবেন।
করোনাভাইরাসে বয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সে জন্য ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপি। সোমবারেও এই দাবি জানিয়েছে দলটির আইনজীবী শাখা। সেই দাবি মেনেই খালেদাকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কি না, জানতে চাইলে সরকারের তরফে জবাব দেওয়া হয়নি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির বলেন, “তাঁর মুক্তি নিয়ে সারাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন ছিলেন। ছয় মাসের জন্য হলেও অসুস্থ নেত্রী মুক্ত থাকবেন, এতে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন তাঁরা।” তবে ফখরুল জানান, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চিন্তিত এই জন্য যে দেশের বাইরে যেতে না পারলে খালেদা সুচিকিৎসা পাবেন না।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদাকে প্রথমে ৫ বছর এবং পরে তা বাড়িয়ে ১০ বছরের সাজা দেয় আদালত। অন্য দিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। দুই মামলায় খালেদার মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়। ২০১৮-র ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন খালেদা। সম্প্রতি বয়সজনিত নানা অসুখে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছিল।