আলিঙ্গন: পিতা-কন্যার পুনর্মিলনের দৃশ্য।—ছবি এপি।
সেই পুরনো চেহারা। যাত্রী সমাগমে হইচই পড়ে গিয়েছে রোমের লিয়োনার্দো দা ভিঞ্চি বিমানবন্দরে। আজ থেকে এ দেশে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সীমানা পুরোপুরিখুলে দেওয়া হল। কিন্তু একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, অন্য দেশগুলো কতটা গ্রহণ করবে ইটালীয়দের। তবে এটা স্পষ্ট, করোনা-সংক্রমণের জেরে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা পরিবারগুলো আবার এক হলেও ইটালির স্বাভাবিক জীবন ফিরতে ঢের দেরি।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইটালি-ই প্রথম, যারা সম্পূর্ণ ভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত খুলে দিল। পর্যটকদের ১৪ দিন কোয়রান্টিনে থাকার নিয়মও তুলে দিচ্ছে তারা। এই ইটালিই ভয়ানক ভাবে করোনা-আক্রান্ত হয়েছে। সাড়ে ৩৩ হাজার মারা গিয়েছেন এ দেশে। ইউরোপের অন্যান্য দেশ ১৫ জুনের পরে সিদ্ধান্ত নেবে। কেউ কেউ তারও অনেক পরে দেশের সীমানা খুলবে। এই সব দেশের বক্তব্য, করোনা পরিস্থিতিতে ইটালির পর্যটন শিল্প একেবারে ভেঙে পড়েছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বেপরোয়া হয়ে এই সিদ্ধান্ত। তবে পর্যটকদের বিষয়ে কয়েকটি জিনিস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেমন, কোন দেশের পাসপোর্ট রয়েছে, তিনি যে অঞ্চলে থাকেন সেখানে সংক্রমণ কেমন হয়েছে ইত্যাদি।
রোমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজ দেখা গেল বহু পুনর্মিলনের দৃশ্য। কয়েক মাস বাদে প্রেমিকাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন আন্দ্রে মন্টি। ক্যাটরিনা শের্ফ জার্মানির ডুসেলডর্ফে আটকে পড়েছিলেন। মন্টি বলেন, ‘‘অতিমারির আগে দেখা হয়েছিল। তার পর এই...।’’ তবু আজ বিমানবন্দরে ভিড় তুলনায় অনেকটাই কম ছিল। হাজার খানেক লোক যাতায়াত করেছেন। গত বছর এই দিনে সেখানে ১ লাখ দশ হাজারের কাছাকাছি যাত্রী-সমাগম হয়েছিল।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভকারীদের জন্য দরজা খুলে দিলেন রাহুল
পড়শি রাষ্ট্র জার্মানি কিন্তু এখনই সীমান্ত খোলা নিয়ে নিশ্চিত নয়। তারা জানিয়েছে, ১৫ জুন থেকে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াতে অনুমতি দেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। যদি অনুমতি দেওয়াও হয়, দেশবাসীকে পরামর্শ দেওয়া হবে, যতটা সম্ভব কম বিদেশ-সফর করতে। ফ্রান্সও সীমান্ত খুলতে চলেছে ১৫ জুন।
অস্ট্রিয়াও তাদের সীমান্ত খুলতে চলেছে। তবে ইটালির জন্য নয়। ইটালির ভয়ানক সংক্রমণ এত তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে চায় না তারা। ব্রিটেন আগামী সপ্তাহ থেকে দেশে ঢোকার ছাড়পত্র দিতে চলেছে। কিন্তু ১৪ দিন কোয়রান্টিনে থাকতে হবে। ইউরোপে সব চেয়ে বেশি মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছে ব্রিটেন-ই।
আরও পড়ুন: ‘আমার বাবা তো দুনিয়াই বদলে দিল!’ || মেয়েটা বড় হয়ে গেল আট দিনে
ও দিকে, ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সুইডেন। পারস্পরিক দূরত্ববিধি মানলেও লকডাউন তারা করেনি। মৃত্যুহার সব চেয়ে বেশি এ দেশে। ১ কোটি মানুষের এই দেশে মারা গিয়েছেন সাড়ে চার হাজার লোক। সুইডিশ বিজ্ঞানীরাই আক্ষেপ করছেন— ‘‘এর থেকে ভাল ভাবে লড়তে পারতাম আমরা।’’
লকডাউন উঠেছে চিনেও। এই ভাইরাসের উৎস চিন এখন অনেকটাই পুরনো চেহারায়। তাই দূষণের মাত্রাও সেই আগের মতো। তবে লকডাউন-পরবর্তী পর্যায়ে মৃতের সংখ্যা চিনের মতো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে কি না অন্য দেশগুলো, সে প্রশ্ন থাকছে। বাংলাদেশে রবিবার থেকে ‘সাধারণ ছুটি’ উঠে যেতেই করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫৫,১৪০। মৃত ৭৮৬ জন।