রিয়া লাখানি। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।
কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে অনেক সময় খাওয়ার কথা মনে থাকে না। কিন্তু শ্বাস নেওয়ার কথা কি কাউকে কখনও মনে করিয়ে দিতে হয়? আর পাঁচটা মানুষ এই সমস্যায় না পড়লেও, মনে করে শ্বাস নেওয়াই এখন রোজকার কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে সদ্য করোনা থেকে সুস্থ হওয়া রিয়া লাখানির।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত রিয়া লন্ডনের বাসিন্দা। সম্প্রতি নোভেল করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। শেষমেশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন যদিও, কিন্তু এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। বাড়িতে বসে বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। রিয়ার কথায়, ‘‘নিশ্বাস-প্রশ্বাস একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু আজকাল এই কাজটাই মনে করে করতে হচ্ছে আমাকে।’’
সাত বছর আগে একাট রোগ ধরা পড়ে রিয়ার, চিকিৎসার ভাষায় যাকে বলে আকালেসিয়া। এই রোগে খাবার খাবার গিলতে সমস্যা হয় রোগীর। তাই শক্ত খাবার এড়িয়েই চলতেন তিনি। সম্প্রতি অস্ত্রোপচারের কথা ছিল তাঁর। সেই মতো হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হন তিনি।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত আরও ৫৯১ জন, করোনা আক্রান্ত মোট ৫৮৬৫, মৃত্যু ১৬৯ জনের
রিয়া জানিয়েছেন, হাসপাতালে প্রথমে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। তার পর গায়ে জ্বর আসে। অস্ত্রোপচারের সাইড এফেক্ট ভেবে প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি তিনি এবং চিকিৎসকদের কেউই। কিন্তু চারিদিকে করোনার প্রকোপের কথা মাথায় রেখে তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তাতেই তাঁর শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
হাসপাতালে রিয়ার অবস্থার অবনতি হলে লন্ডনে একটি কোভিড-১৯ সেন্টারে স্থানান্তরিত করা হয় রিয়াকে। সেখানে চিকিৎসকদের চোখেমুখে তাঁকে নিয়ে উদ্বেগ স্পষ্ট ধরা পড়ে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে দাঁড়ায় যে, শ্বাস নেওয়া পাহাড় চড়ার মতোই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমাকে নিয়ে সকলেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ডাক্তাররা নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু করেন।’’
একটা সময় বেঁচে ফেরার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন রিয়া। তিনি বলেন, ‘‘মরতেই বসেছিলাম আমি। ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারব ভাবিনি। আর দেখা হবে কি না হবে, তার জন্য পরিবারের লোকেদের জন্য শেষ চিঠি লেখাও শুরু করে দিয়েছিলাম। মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছি। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে ফিরব কী করে, তা এখনও জানি না।’’
আরও পড়ুন: মনের জোরেই ৮২ বছর বয়সে ‘নোভেলজয়ী’ মহারাষ্ট্রের মহিলা
অক্সিজেন জোগানোর পাশাপাশি যন্ত্রণা কম করতে হাসাপাতালে তাঁকে মরফিনও দেওয়া হত বলে জানিয়েছেন রিয়া। তার জেরে কথা বলতেও কষ্ট হত বলে জানিয়েছেন তিনি। শেষমেশ বাড়ি যদিও ফিরতে পেরেছেন, কিন্তু বাড়িতে এখনও একঘরেই রয়েছেন রিয়া। স্বামী, মা-বাবা, বন্ধুবান্ধব কারও সঙ্গেই সাক্ষাতের অনুমতি নেই তাঁর।
তবে করোনা তাঁকে অনেক কিছু শিখিয়ে গেল বলে জানিয়েছেন রিয়া। তিনি বলেন, ‘‘একটা সময় এমন এসেছিল, যখন ফের দিনের আলো দেখতে পাব কি না জানতাম না। সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। তখনই পরিবারের অভাবটা আরও বেশি করে বুঝতে পারছিলাম। যে মুহূর্তে হাসপাতাল ছেড়ে বেরোলাম, সে যে কী অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। তবে একটা কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি, জীবনে আর কখনও কোনওকিছুকেই আর বাঁধাধরা বলে ধরে নেব না।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)