ছবি: রয়টার্স।
চিনা ভাষায় হংকং কথাটির অর্থ— সুগন্ধযুক্ত বন্দর। এখানে আসার পর থেকে সে রকম ‘সুগন্ধ’ কোথায় মিলবে তা বুঝতে না-পারলেও এটুকু বুঝেছি, এই ছোট্ট দেশে সুব্যবস্থা রয়েছে পুরোদস্তুর। প্রতিদিনের জীবনযাপনে এই সুব্যবস্থার পরিচয় আগেই পেয়েছি। আরও ভাল বুঝলাম গত কয়েক মাসে, এই অতিমারি-কালে।
এ দেশে করোনার দাপট শুরু হয় চিনের ঠিক পরেই, সেই জানুয়ারি মাসে। সেই থেকে দফায় দফায় এসেছে করোনার জোয়ার। চিনের মূল ভূখণ্ডের এত কাছে হয়েও প্রথম দিকে হংকং করোনার প্রকোপ খুব ভাল ভাবেই সামাল দিয়েছিল। এপ্রিল মাসের শেষে এখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৪৫ আর মৃতের সংখ্যা মাত্র চার!
২০০৩-এ সার্স মহামারির পর থেকে হংকংয়ের বাসিন্দারা পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে খুব সচেতন। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই দেখেছি, জনবহুল জায়গায়, যেমন মেট্রোয়, সবাই মাস্ক পরেন। অনেকের ব্যাগ থেকে স্যানিটাইজ়ারের বোতলও ঝুলতে দেখেছি। দোকানে-দোকানে অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল ওয়াইপের বিক্রিও হতো পুরোদমে।
আরও পড়ুন: ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ না করে বাজারে কোভিড টিকা নয়, জানাল তিন মার্কিন ওষুধ কোম্পানি
কোভিড-১৯ অতিমারি রূপে আবির্ভাব হওয়ার পরে এই দেশের সুব্যবস্থার চূড়ান্ত উদাহরণ দেখলাম। স্কুল-কলেজ সম্পূর্ণ ভাবে অনলাইন হয়ে গেল। রাস্তাঘাটে, দোকানে-বাজারে, মেট্রো ও ট্রেন স্টেশনে বসানো হল হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারের বোতল। সব এস্ক্যালেটর, লিফ্ট, সিঁড়ির ধারের রেলিং দিনে বহু বার পরিষ্কার করা শুরু হল। সমস্ত লিফ্টে নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হল যে সেই লিফ্টে র বোতাম দিনে কত বার, স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে। সবার মুখে মাস্ক, আর মাস্ক না-পরলেই ৫০০ হংকং ডলার (৪৭ হাজার টাকা) পর্যন্ত জরিমানা!
সমস্ত নাইট ক্লাব, বার বন্ধ করা হল। সমস্ত অফিস-কাছারি, সুপারমার্কেট, শপিং মলে ঢোকার দরজায় নিযুক্ত হলেন অসংখ্য কর্মী যাঁরা বন্দুকের মতো তাক করে থাকেন ইলেক্ট্রনিক থার্মোমিটার, আর তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০০.৪ ফারেনহাইট) ওপরে গেলেই ভেতরে প্রবেশ নিষেধ।
বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো এখানেও অর্থনীতি বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে, রোজগার কমেছে অনেকের। তখন সরকারের থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এবং ‘পার্মানেন্ট রেসিডেন্টদের’ দশ হাজার হংকং ডলার (প্রায় এক লক্ষ টাকা) করে ত্রাণ দেওয়া হবে। আর স্কুলের বাচ্চাদের দেওয়া হবে সাড়ে তিন হাজার হংকং ডলার (৩৩ হাজার টাকা) করে। অর্থনীতি ধাক্কা খেলেও সরকার দাঁড়াল সাধারণ মানুষের পাশে।
(লেখক ল ফার্মে কর্মরত)