Coronavirus

রোদ উঠতেই করোনা ‘মারতে’ রাস্তায় ফরাসিরা

বিশ্বভারতী থেকে ফাইন আর্টসের পড়াশোনোর শেষলগ্নে দু’দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তির সৌজন্যে ফ্রান্সে এসেছি জানুয়ারিতে।

Advertisement

শ্রবণা চক্রবর্তী

অঁজ়ে (ফ্রান্স) শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২০ ০৩:৪৭
Share:

ছবি এএফপি

ফরাসিরাও আর পারছেন না।

Advertisement

দু’মাস হয়ে গেল লকডাউনের। প্যারিস থেকে ৩০০ কিলোমিটার পশ্চিমের এই অঁজ়ে শহরটা যেমন স্যাঁতসেতে, তেমনি ঠান্ডা। মাসে দু’একটা দিন চার দিক হেসে রোদ ওঠে, যেমন পরশু। সে কী হইচই! ছেলে-বুড়ো নির্বিশেষে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে হুটোপাটি করছেন। বাড়ির মালকিন আমাকেও ডাক দেন, “এসো, রোদে শরীর সেঁকলে করোনাভাইরাস মরে যাবে!” মাস্কের খোঁজে রবিবার ওষুধের দোকানে যেতে হল। এ দিনও পেলাম না। তবে দেখলাম নানা অজুহাতে কম লোক রাস্তায় বেরোননি!

বিশ্বভারতী থেকে ফাইন আর্টসের পড়াশোনোর শেষলগ্নে দু’দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তির সৌজন্যে ফ্রান্সে এসেছি জানুয়ারিতে। শহরটা সড়গড় হওয়ার আগেই শুরু হয়ে গেল করোনা-আতঙ্ক। ১৪ মার্চ আচমকাই শুরু লকডাউন। খুব দুর্ভোগে কাটিয়েছি প্রথম কয়েকটা সপ্তাহ। পাঁউরুটি খেয়ে চার বেলা কাটাতে হয়েছে। অঁজ়ে-তে ভারতীয় হাতে গোনা, আর বাঙালি সম্ভবত আমি একা। সুপারমার্কেটে ভারতীয় রান্নার সামগ্রী কিছুই মেলে না। শেষ পর্যন্ত এক দক্ষিণী পরিবার দেবদূতের মতো আমাকে কিছুটা চাল-ডাল জোগাড় করে দেওয়ায় এখন স্বস্তি।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভিড়ের মধ্যে থেকে একটি মিনি ট্রাক উড়ে গেল হাওয়ায়

অঁজ়ে-র মানুষ খুব মিশুকে। বিনা কারণেই সবাই উইশ করেন। সেটাও একটা কারণ তাঁদের হাঁফিয়ে ওঠার। ঘরবন্দি থাকা তাঁদের ধাতে নেই যে। আমারও কি আছে? বোলপুর-বিশ্বভারতী সাইকেলে চরকি পাক দিয়ে আসা মেয়ে মাস-দু’মাস ঘরবন্দি! অনলাইনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, কোন্নগরের বাড়ির খোঁজখবর রাখা। আজ অনলাইনে পরীক্ষাও দিলাম।

প্রথম প্রথম স্থানীয় লোকেদের বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখতাম। অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর ভরসা ছিল খুব। ভেবেছিলেন, কয়েকটা সপ্তাহের লকডাউনেই করোনা রুখে দেওয়া যাবে। কিন্তু এত সংক্রমণ, এত মৃত্যুর ভার— সেই আত্মবিশ্বাস এখন উধাও।

অনলাইনে দেশের খবর পাই। শুনি অনেকেই নানা অছিলায় দূরত্ব-বিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। কোথাও মদের দোকানে লম্বা লাইন, তো কোনও বাজারে হামলে পড়া ভিড়। চিন্তা হয় বাড়ির মানুষগুলোর জন্য।

আপাতত লকডাউন সয়ে নেওয়া ছাড়া উপায় কী! এখানে দিনটা খুব বড়। রাত ১০টার পরে সন্ধ্যা নামে। সারাটা দিন ঘরের জানলা দিয়ে রাস্তা দেখি। ছবি আঁকি। টুকটাক নকশা তুলি সাদা কাপড়ে। আর অপেক্ষা করি কখন ‘বিকেল’ ৮টা বাজবে। সবার সঙ্গে আমিও জানলায় দাঁড়িয়ে হাততালি দিই। রোজ। মিনিট পাঁচেকের এই ব্যাপারটা আমাকে এনার্জি দেয়। মনে হয়, একা নই। সবাই কেমন বেঁধে বেঁধে আছি! সেটাই যে সব চেয়ে প্রয়োজন।

(লেখিকা ফাইন আর্টসের ছাত্রী)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement