ব্রাজিলের সব হাসপাতালে উপচে পড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ছবি রয়টার্স।
এক দিনে ৪১৯৫ জনের মৃত্যু হল কোভিডে। গোটা বিশ্বে রেকর্ড গড়ল ব্রাজিল। তীব্র সমালোচনার মুখে প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। ‘গণহত্যাকারী’ বলে আঙুল তোলা হচ্ছে তাঁর দিকে। তিনি অবশ্য সে দায় কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলে স্বমহিমায়। বলেছেন, ‘‘সবই নাকি আমি করি!’’
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ঘোষণা অনুযায়ী, ১ কোটি ৩১ লক্ষ বাসিন্দা করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন ব্রাজিলে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত ৮৭ হাজার। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার এক দিনে ৪১৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত এটি গোটা বিশ্বে সব চেয়ে বেশি দৈনিক মৃত্যু। মোট প্রাণহানি ৩ লক্ষ ৩৭ হাজার।
বোলসোনারো চিরকালই অতিমারিকে লঘু করে দেখিয়েছেন। নিজে মাস্ক পরেননি। দূরত্ববিধি মানেননি। লকডাউনের বিরোধিতা করেছেন। নিয়ম ভাঙাতেই উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। যে সব গভর্নর, মেয়র নিজেদের উদ্যোগে আঞ্চলিক করোনা-বিধি জারি করেছেন, তাঁদের দিকে আপত্তিকর ভাষায় আক্রমণ হেনেছেন। এমনকি নিজের সংক্রমিত হওয়ার খবর দিতে সাংবাদিকদের সামনে এসেছিলেন বিনা-মাস্কে। স্বাভাবিক ভাবেই এই তিন লক্ষাধিক মৃত্যুর জন্য তাঁকে দায়ী করছেন দেশবাসী।
বোলসোনারো অবশ্য সমালোচনার মুখেও একরোখা। প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের বলেছেন, ‘‘ওরা আমায় সমকামীবিদ্বেষী, সমকামের প্রতি আতঙ্কগ্রস্ত বলে। জাতিবিদ্বেষী বলে। ফ্যাসিস্ট বলে। আমি নাকি অত্যাচারী। আর এখন... এখন কী বলা হচ্ছে? আমি নাকি গণহত্যা করেছি!’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে এই ভিডিয়ো। বোলসোনারো আরও বলেন, ‘‘ব্রাজিলে সবই আমি করি। আমাকে কীসে অপরাধী করা হয় না?’’
এত দিন পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলে এসেছেন, ‘‘অতিমারি কিচ্ছু নয়, মিডিয়ার আবিষ্কার। কয়েক মিনিটে সব ঠিক করে দিতে পারি।’’ করোনা-বিধির বিরোধিতা করে মিথ্যা ভাষণ করেছেন, ‘‘যে সব রাজ্যে বেশি কড়াকড়ি চলছে, সেখানেই বেশি মৃত্যু হচ্ছে।’’ ব্যাখ্যা দিয়েছেন— ‘‘আমি কিছু গবেষণাপত্র দেখেছি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে কোভিডে সমস্যা হয় না। বাড়িতে বন্দি থেকে ওজন কি একটুও বেড়েছে? আমার তো একটু ভুঁড়ি হয়েছে।’’ এই সব রসিকতার পরে জবাবদিহি করতে হবে তাঁকেই। গড়ে দৈনিক সংক্রমণ লাখের কাছাকাছি। দৈনিক মৃত্যুতে বিশ্বরেকর্ড। হাসপাতালে আইসিইউ উপচে যাচ্ছে। তার মধ্যে নতুন স্ট্রেনের আবির্ভাব। এই স্ট্রেনে অল্পবয়সিরা বেশি করে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত কাল বোলসোনারো জানিয়েছেন, রুশ ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি কেনার ভাবনাচিন্তা চলছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র হিসেবে, সাপ্তাহিক সংক্রমণে সবচেয়ে এগিয়ে ব্রাজিল, আমেরিকা, তুরস্ক, ফ্রান্স ও ভারত। টিকাকরণে এগিয়ে আমেরিকা ও ব্রিটেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেছেন, ১৯ এপ্রিল থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হলেই টিকা মিলবে। ইউরোপের বহু দেশই নতুন করে লকডাউন জারি করেছে। এ দিকে, অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার টিকা নিয়ে আবার ৭ জনের মৃত্যু হওয়ায় ছোটদের উপরে ট্রায়াল বন্ধ করল অক্সফোর্ড। মৃত্যুর কারণ সেই একই, শরীরে রক্ত জমাট বা ‘সাইনাস থ্রম্বোসিস’।