ছবি: সংগৃহীত।
ব্রিটেনের করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। স্বীকার করল সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসচিব ম্যাট হ্যানককের কথায়, “দেশের করোনা পরিস্থিতি অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।” করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেনের জেরেই যে দেশে দ্রুত গতিতে সংক্রমণ বাড়ছে, তা মনে করছে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, দক্ষিণ ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকটি এলাকায় করোনাভাইরাসের একটি নতুন স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে। এই নতুন স্ট্রেনটি আগের থেকে ৭০ শতাংশ গতিতে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। পরিস্থিতির মোকাবিলায় রবিবার থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ড এবং লন্ডনে নতুন করে লকডাউনের ঘোষণা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যদিও বড়দিনের আগে এই লকডাউনের ফলে ছুটির আনন্দ মাটি হওয়ায় ক্ষুব্ধ আম জনতা থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীল দলের রাজনৈতিক নেতারা। করোনা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় হ্যানককের ইস্তফা দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির এমপি চার্লস ওয়াকার।
ইংল্যান্ডে সংক্রমণের গতি বাড়ায় সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসে। ইংল্যান্ডের নাগরিকদের স্কটল্যান্ডে ঢোকা নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। অন্য দিকে, দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের মতোই ওয়েলসে ফের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: টিকার প্রথম ডোজে অ্যালার্জি হলে দ্বিতীয় টিকা না নেওয়ার পরামর্শ আমেরিকায়
নিজের দলের অন্দরে সমালোচিত হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্রিটেনের বাসিন্দাদের ঘরবন্দি থাকার অনুরোধ করেছেন হ্যানকক। বড়দিনের আগে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ড এবং লন্ডনে সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়ে ‘টিয়ার ফোর’ করা হয়েছে। যার অর্থ, ওই অঞ্চলে পুরোপুরি লকডাউন চলবে।
ব্রিটেনে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি কোভিড টিকাকরণ শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩৫ হাজার বাসিন্দাকেই প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। হ্যানকক জানিয়েছেন, সকলের টিকাকরণ না হলে মাসের পর মাস লকডাউন চলতে পারে। তিনি বলেছেন, “এ নিয়ে কোনও সহজ পন্থা নেই। কোভিড নিয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ অগ্রাহ্য করলে বড় ভুল করা হবে।”
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরের শেষে ব্রিটেনে ছাড়পত্র পেতে পারে অক্সফোর্ডের টিকা
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সতর্কতা সত্ত্বেও লকডাউন এড়ানোর জন্য লন্ডন বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন এবং রাস্তাঘাটে ভিড় দেখা গিয়েছে। বড়দিনের ছুটির আগে লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় অনেকেই যে হতাশ, তা নিয়ে ওয়াকিবহাল প্রশাসন। রবিবার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কম্যান্ডার অ্যালেক্স মারে বলেন, “আমি জানি ক্রিসমাসের সময়ে এ ভাবে ছুটি ভেস্তে যাওয়ায় লন্ডনবাসীরা হতাশ। তবে যে গতিতে ভাইরাস ছড়াচ্ছে, তা গভীর উদ্বেগজনক। সকলকে সুরক্ষিত রাখতে এবং সংক্রমণের গতি কমাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে হবে।”
লকডাউনের নিময়ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানিয়েছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। অ্যালেক্সের কথায়, “লকডাউন কার্যকর করতে শহরের সমস্ত জায়গায় অফিসারেরা মোতায়েন থাকবেন। যাঁদের স্বার্থপর আচরণে লন্ডনবাসীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”