করোনার বিরুদ্ধে লড়াই জারি। ছবি: রয়টার্স
শুরু হয়েছিল ডিসেম্বরের শেষ দিকে। চিনের হুবেই প্রদেশের শহর উহান থেকে। কিন্তু শহর, দেশ ছাড়িয়ে করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বের ত্রাস। ছড়িয়ে পড়েছে ১৭০টিরও বেশি দেশে। এক সময় হয়তো বিশ্বের কোনও দেশই আর সংক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৫ হাজার। আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৫ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে।
মৃত্যুর হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে ইটালি। সেখানে এক দিনে ১০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যা এক দিনে সর্বোচ্চ। তবে সর্বমোট আক্রান্তের নিরিখে বাকি দেশগুলিকে ছাপিয়ে গিয়েছে আমেরিকা। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯৩ হাজার।
ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চিনের উহান শহরকে ধরা হলেও বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইটালিতে। মৃতের সংখ্যার নিরিখে সবচেয়ে উপরে ইটালি। তার পর যথাক্রমে রয়েছে স্পেন, চিন ইরান ও ফ্রান্স। ইটালিতে সংখ্যা ৮২১৫। আক্রান্ত ৮০ হাজার ৫৮৯ জন। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১০ হাজার ৩৬১ জন।
ইটালির পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ হয়েছে স্পেনে। সেখানে আক্রান্ত ৫৭ হাজার ৭৮৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪৩৬৫ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭০১৫ জন। স্পেনের পর চিন। তবে চিনে এখন করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেছে শি চিনফিং প্রশাসন। সেখানে নতুন করে আর তেমন কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন না বলে দাবি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৮২৮। মৃত্যু হয়েছে ৩২৯২ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭৪ হাজার ৫৮৮ জন।
ইরানে আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ হাজার ৪০৬ জন। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৩৭৮ জনের। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ১১ হাজার ১৩৩ জন। অন্য দিকে ফ্রান্সে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬৯৬ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ২৯ হাজার ৫৬৭। সুস্থ ৪ হাজার ৯৪৮ জন।
আরও পড়ুন: করোনা আপডেট: আমেরিকায় আক্রান্ত বেড়ে ৮৫ হাজার, ছাপিয়ে গেল চিন, ইটালিকেও
কিন্তু করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা বোঝাতে শুধুমাত্র এই পরিসংখ্যানই যথেষ্ট নয়। গোটা বিশ্বে যে ভাবে নতুন নতুন দেশে ছড়াচ্ছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে এক সময় বিশ্বের কোনও দেশেই সংক্রমণ বাকি থাকবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত বছরের ডিসেম্বরে চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে যে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, এখন তা ছড়িয়েছে প্রায় ১৭৫টিরও বেশি দেশে।
বর্তমানে সারা বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮০৮। মৃতের সংখ্যা ২৪ হাজার ১২৭। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লক্ষ ২৩০ হাজার ৩১২ জন। তবে আশার কথা আক্রান্ত হয়ে যাঁরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাঁদের ৯৫ শতাংশেরই সংক্রমণ মৃদু। বাকি পাঁচ শতাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।
আবার মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন যে ভাবে বাড়ছে, তাতেও শঙ্কার আবহ গোটা বিশ্বেই। গত ২২ জানুয়ারি থেকে পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। কয়েক দিন আবার বৃদ্ধির হার পৌঁছে গিয়েছে তিন গুণ বা তারও বেশি। মৃতের সংখ্যাতেও একই রকম পরিসংখ্যান। ২৫ মার্চ এক দিনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৯ হাজার ৭০০ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ২৩৮৮। গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ হাজার ৯০০ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৭৯১ জনের। শুক্রবারের পুরো হিসেব পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: করোনার ধাক্কায় বেহাল বিশ্ব অর্থনীতিতে ৫ লক্ষ কোটির প্যাকেজ দেবে জি-২০
তবে ইটালি, স্পেনের পর এখন করোনার ভরকেন্দ্র আমেরিকা। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মার্কিন মুলুকে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৩০০ জনেরও বেশি। আক্রান্ত ৮৫ হাজার ৯৯১ জন। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৮৬৮ জন। মৃত্যুর হার বেশি না হলেও যে হারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে তীব্র উদ্বেগে মার্কিন প্রশাসন। সবেচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে নিউইয়র্ক ও নিউ অরলিন্সের মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি দিন লাফিয়ে বাড়তে থাকায় টান পড়েছে ভেন্টিলেটর, টেস্ট কিট, সুরক্ষা পোশাক, মাস্ক-এর মতো সামগ্রীর। হাসপাতালে স্থান সংকুলান কঠিন হয়ে পড়েছে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ