ছবি রয়টার্স।
উত্তর আমেরিকায় যে পাঁচটি সুবিশাল হ্রদ আছে, তার মধ্যে লেক মিশিগান অন্যতম। এই লেকের ধারেই শিকাগো, প্রচলিত নাম— ‘উইন্ডি সিটি’। শিকাগোর একটি শহরতলিতে আমার বাস গত আট বছর। জানুয়ারির শেষে জানতে পারি যে, আমেরিকার প্রথম ‘পার্সন টু পার্সন’ বা মানুষ থেকে মানুষে কোভিড-১৯-র সংক্রমণের হদিস িশকাগোতেই পাওয়া গিয়েছে। সে রোগী আমাদের কাছেরই একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং পরে সুস্থ হয়ে ছাড়াও পেয়ে যান।
এখানে কড়া শীতে তিন মাস কাটিয়ে মানুষ বসন্তের অপেক্ষায় উন্মুখ থাকেন, কিন্তু এ বার বসন্ত এক্কেবারে অচেনা। মার্চের প্রথমেই আঁচ পাচ্ছিলাম একটা কঠিন পরিস্থিতি আসতে চলেছে। মার্চের মাঝামাঝি স্কুল, কলেজ, লাইব্রেরি, জিম ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যায়। তালা পড়ে যায় এখানকার বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের মূল কেন্দ্র ‘বঙ্গ ভবন’-এ-ও। আমাদের প্রদেশ ইলিনয়ের গভর্নর একুশে মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পৰ্যন্ত ‘স্টে অ্যাট হোম’ অর্থাৎ ঘরবন্দি থাকার নির্দেশিকা দেন। পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় ঘরবন্দি থাকার সময়সীমা ৭ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এখানে এখন শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবাগুলি চালু আছে। আমার দশ বছরের ছেলে এখন ‘গুগ্ল ক্লাসরুম’-এর মাধ্যমে পড়াশুনো করছে। ওর সাপ্তাহিক পিয়ানো ক্লাসও অনলাইনে চলছে। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আমি ও আমার স্বামী বাড়ি থেকেই কাজ করছি।
আমাদের রাজ্য ইলিনয়তে এপ্রিল এর দ্বিতীয় সপ্তাহে মৃত্যু হার অনেকটা বেড়ে যায়। সুনসান রাস্তাঘাট আর বাজার। দোকানবাজারের বেশির ভাগই এখন অনলাইনে। ডেলিভারিও হাতে হাতে নয়। কিছু নিত্যসামগ্রীর অর্ডার দিয়েছিলাম, তারা সেগুলি গ্যারাজের বাইরে রেখে চলে গেলেন। দু’সপ্তাহ আগেও অনলাইনে অর্ডার করলে দু-তিন দিনে জিনিস পাওয়া যেত, সেটা বেড়ে এখন ছ’-সাত দিন হয়েছে। বহু জিনিস পাওয়াও যাচ্ছে না।
সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমাদের রাজ্যে সংক্রমণ সংখ্যা ত্রিশ হাজার ছাড়িয়েছে, আর মৃতের সংখ্যা ১৩০০-র বেশি, যেখানে আমেরিকার মোট সংক্রমণ সংখ্যা এখনও পর্যন্ত প্রায় আট লক্ষ এবং মৃত্যু ৪১ হাজার পার করেছে।
কিছু দিন আগে পর্যন্ত পাড়ার রাস্তায় লোকজন কুকুর নিয়ে হাঁটতে বেরোতেন বা নিজেরাই দৌড়তেন, ইদানিং খুব কম সংখ্যক পথচারী চোখে পড়ে। হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার বহু দিন হল বাজারে নেই, তাই বাড়িতেই দফায় দফায় তৈরি করা হচ্ছে সেটা। পরিস্থিতিই আমাদের অন্য ভাবে বাঁচতে শেখাচ্ছে এবং পরিণত করছে। এই অনিশ্চয়তা কবে কাটবে সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন।
(লেখক হেলথকেয়ার সংস্থায় কর্মরত)
আরও পড়ুন: খুলছে প্রত্যর্পণের রাস্তা, বিজয় মাল্যর মামলা খারিজ লন্ডনের আদালতে