সুনসান বেলজিয়াম। ছবি: এপি।
ব্রাসেলসে কোভি়ড-১৯ রোগ ধরা পড়তে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে। যত দূর মনে পড়ছে, সেই সময়ে বেলজিয়ামে সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৩০০-র মতো। সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা প্রবল। তাই ইটালির মতো পরিস্থিতি এড়াতে ১৩ মার্চ সন্ধে থেকেই বেলজিয়াম জুড়ে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এখনও সেই তালাবন্দি দশাই চলছে। যার জেরে চেনাজানা চারপাশটা হঠাৎ যেন বদলে গিয়েছে এক ধাক্কায়। এ দেশের লোকেরা বাঙালিদের মতোই খাদ্যরসিক। ইউরোপের আর পাঁচটা শহরের মতো ব্রাসেলসেও বার, রেস্তরাঁ প্রচুর। অনেকে চাকরিও করেন এই সব জায়গায়। সপ্তাহান্তে তো বটেই, সপ্তাহের মাঝখানেও সন্ধে হলেই জায়গাগুলো গমগম করতে দেখেছি। কিন্তু লকডাউনের ব্রাসেলসে এখন সব খাঁ খাঁ। সব বন্ধ। সরকারি নির্দেশে শুধু অত্যাবশ্যক পণ্যের দোকান, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল আর ক্লিনিকগুলো খোলা।
বেলজিয়ামের যা জলবায়ু, তাতে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এখানে বিশেষ রোদ ওঠে না। তাই মার্চ-এপ্রিলে বসন্তের আগমনে দিন কিছুটা বড় হতেই এখানকার লোকেরা সপরিবার বেরিয়ে পড়েন ব্রাসেলসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য পার্কে। আর সপ্তাহান্তের ছুটি পেলেই অনেকে বেরিয়ে পড়েন আর একটু দূরের কোনও গন্তব্যে। যেমন, ফ্রান্সের সীমান্ত-ঘেঁষা আর্ডেন পর্বতমালা। ব্রাসেলস থেকে এই জায়গাটা খুব বেশি দূরে নয়, গাড়িতে বড় জোর ঘণ্টা দুয়েকের পথ। পরিবার নিয়ে দিব্যি দু’দিন সেখানে ছুটি কাটিয়ে ফের নতুন উদ্যমে কাজে ফেরা যায়। কিন্তু এখন আর সে সব কই! সব বন্ধ।
এখন পার্কে বসে থাকলে বা অকারণে রাস্তায় কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেখলেই ২৫০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করছে পুলিশ। কড়াকড়ি সর্বত্র। ছাড় শুধু সাইক্লিং ও জগিংয়ে। এ দু’টোই দেশের মানুষের বড্ড পছন্দের!
এখানে বাজার বলতে সুপারমার্কেট। সেখানে মোটামুটি সব রকমের খাবার এখনও পাওয়া যাচ্ছে। লকডাউন চললেও মাছ, মাংস বা আনাজ সরবরাহে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। প্রয়োজনে রাস্তায় বেরোতেই হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
এ দিকে লকডাউনের মধ্যেও দেশের নানা প্রান্ত থেকে সংক্রমণের খবর মিলছে। আজ, শনিবার পর্যন্ত বেলজিয়ামে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। মারা গিয়েছেন ৩৩৪৬ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টাতেই মারা গিয়েছেন ৩২৭ জন। সরকারের অবশ্য আশ্বাস, করোনা-গ্রাফ দেশে এখন নিম্নমুখী। সংক্রমণও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। মানুষও তাই আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করছেন মেঘ কাটার। হাতছানি দিচ্ছে বিকেলের পার্ক, সন্ধের বার-রেস্তরাঁ ও সপ্তাহান্তের আর্ডেন।
(লেখক ইঞ্জিনিয়ার)