নয়াদিল্লি স্টেশন থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা শুরু। ছবি: পিটিআই
শ্রমিক স্পেশাল আগে থেকেই চালু হয়েছে। আজ থেকে দেশে নির্দিষ্ট কিছু রুটে শুরু হয়ে গেল যাত্রিবাহী ট্রেনও। কিন্তু এই ট্রেন সফর যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার একটা ছবি পাওয়া গেল চিনের উহানের একটি গবেষণায়। একটি যাত্রীভর্তি বাসের মধ্যে মাত্র এক জন করোনা আক্রান্তের থেকে সংক্রমিত হয়েছিলেন ৯ জন যাত্রী। তার মধ্যে সবচেয়ে দূরের যিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি ছিলেন প্রায় সাড়ে চার মিটার অর্থাৎ ১৪.৭ ফুট দূরে। এই চিত্র থেকেই বিজ্ঞানী-গবেষকরা মনে করছেন, যাত্রিবাহী বাস হোক বা ট্রেন, মাস্ক না পরা এবং প্রয়োজনীয় সাবধানতা না নিলে তার পরিণতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।
ঘটনা এ বছরের ১২ জানুয়ারির। উহানে তখনও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নেয়নি। ফলে লকডাউন তো নয়ই, বাস-ট্রেনেও কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। সেই সময়ে হাঁচি কাশির উপসর্গ নিয়ে একটি বাসে ওঠেন এক যাত্রী। ওই বাসের সিসিটিভি ফুটেজ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করার পর চিনের একটি গবেষক দলের দাবি, ওই অসুস্থ যাত্রীর থেকে ওই বাসের ৯ জন যাত্রী আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই বাসে কারও মাস্ক পরা ছিল না। বাস ছাড়া অন্যত্র ওই ব্যক্তির থেকে আরও ৪ জন সংক্রমিত হয়েছিলেন।
ওই রোগীকে নিয়ে গবেষণা করেছে ‘হুনান প্রভিন্সিয়াল সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’। ওই রোগী কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, কত জনকে সংক্রমিত করেছিলেন সেটা খুঁজে বের করেছেন ওই হু শিংজিয়ং-এর নেতৃত্বে ওই গবেষকদের দল। আর সেটা খুঁজতে গিয়েই ওই বাসের সিসিটিভি ফুটেজ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন ওই বিজ্ঞানীরা। হু শিংজিয়ং বলেন, ‘‘ফুটেজ থেকে দেখা গিয়েছে, দূরপাল্লার ওই বাসটিতে ওই আক্রান্ত ব্যক্তির কারও সঙ্গে কথোপথন হয়নি বা কাউকে তিনি স্পর্শও করেননি।
আরও পড়ুন: দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়াল, মৃত্যু বেড়ে ২,২৯৩
চার ঘণ্টার ওই বাসযাত্রার ফুটেজ থেকে গবেষকরা দেখেছেন, যাত্রার শুরু থেকে পরের গুরুত্বপূর্ণ শহরে পৌঁছনো পর্যন্তই ৭ জন সংক্রমিত হয়েছিলেন। ওই ব্যক্তি পিছনের দিকের একটি সিটে বসেছিলেন। তাঁর পাশের কয়েক জন তো বটেই, ৬টি সারি আগে থাকা এক যাত্রীও সংক্রমিত হয়েছিলেন। আবার আক্রান্ত ব্যক্তি নেমে যাওয়ার প্রায় আধঘণ্টা পর অন্য একটি দল উঠেছিলেন বাসে। তাঁদের মধ্যেও দু’জন সংক্রমিত হয়েছিলেন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
এত দিন পর্যন্ত মনে করা হচ্ছিল, হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে নাক-মুখ থেকে যে ড্রপলেট বের হয়, তা থেকেই করোনায় আক্রান্ত হন অন্যরা। কিন্তু এই গবেষণার পর বিজ্ঞানীদের অনুমান, শুধু ড্রপলেট নয়, প্লাস্টিক বা ধাতুর উপরে অনেকক্ষণ পর্যন্ত করোনার জীবাণু বাঁচতে পারে। পাশাপাশি এক মিটারের যে নিরাপদ দূরত্ব এবং ড্রপলেটের কথা বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের চরিত্র যে তার চেয়েও মারাত্মক, তা বোঝা গিয়েছে এই গবেষণায়।
আরও পড়ুন: ভারতে ফ্যাভিপিরাভির ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করোনা রোগীদের উপর
ভারতে ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে শ্রমিক স্পেশাল। আবার আজ মঙ্গলবার থেকে বেশ কয়েকটি রুটে চালু হয়ে যাচ্ছে যাত্রিবাহী ট্রেন পরিষেবাও। ট্রেনের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি যে বাসের চেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে, তেমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানী-গবেষকরা। কারণ, ট্রেনের ক্ষেত্রে যে এক মিটারের নিরাপদ দূরত্বের কথা বলা হচ্ছে, সেটাও মেনে চলা কঠিন। কারণ, রিজার্ভেশন আসনগুলির মাঝখানের দূরত্ব এক মিটারেরও কম। সব আসনে যাত্রী থাকলে কার্যত গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসতে হয় যাত্রীদের। সেক্ষেত্রে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ